গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ডালিম এর উপকারিতাআমরা সবাই নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে চাই। আর শরীরকে সুস্থ রাখতে ফলমূল শাক সবজির কোন বিকল্প নেই। তেমনি আমাদের ত্বক এবং শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে গাজর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাজর দেখতেও যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। গাজরে ভিটামিন এ, ফাইবার এর মত উপকারী বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখতে গাজর যেমন ভূমিকা পালন করে তেমনি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ক হিসেবে গাজরের অবদান ও অপরিসীম। তাই শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটা মানুষকেই নিয়মিত গাজর খাওয়া উচিত। এখন চলুন গাজর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেই।

কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা

গাজরের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। গাজরে বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্যকর উপকারী উপাদান রয়েছে। যদি আপনি বেশি উপকার পেতে চান তাহলে রান্না করা গাজর খাওয়ার চেয়ে কাচা গাজর খাওয়ার অভ্যাস করবেন। চলুন জেনে নেই কাঁচা গাজর কি কি উপকার পাওয়া যায়।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত কাঁচা গাজর খেলে হরমোন এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ব্রণ নির্মূল করতে গাজরের রস খুবই উপকারী।
  • গাজরে ভিটামিন কে, রয়েছে এছাড়াও ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা শরীরের হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।
  • গাজরে ভিটামিন এ থাকায়, চোখের রোগ জেরফথালমিয়া হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গাজর খাওয়া আবশ্যক। কারণ গাজর আঁশ যুক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ।
  • দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

গাজর খাওয়ার নিয়ম

গাজর খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শুধু গাজরই না যেকোনো ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়ার আগে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। যেমন:
  • ভালোভাবে পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে খাওয়া উচিত।
  • যদি বেশি উপকার পেতে চান তাহলে কাচা গাজর চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এটি দাঁতের জন্য ভালো এবং লিভারের জন্য উপকারী।
  • আর যদি রান্না করে খেতে চান তাহলে বেশিক্ষণ রান্না করবেন না এবং রান্না করা হয়ে গেলে একটু ঠান্ডা করে নেয়ার পর খাবেন।
সতর্কতা বার্তা: অতিরিক্ত গাজর খাওয়া উচিত নয়। কেননা শরীরে ভিটামিন এ এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ত্বক হলুদ হয়ে যেতে পারে ভয়ের কারণ নাই এটা সাময়িক।

গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

অন্যান্য ফলমূল শাক সবজির মত গাজর অনেক উপকারী খেতেও অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। গাজরের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। গাজর খেলে দেহের উপকারের তুলনায় ক্ষতি অনেক নগণ্য। আজকে আমরা জানবো গাজর খেলে আমাদের দেহের কি কি উপকার হয় এবং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো কি রয়েছে তা সম্পর্কে ।
গাজর খাওয়ার উপকারিতাগুলো হলো:
  • আমরা সবাই জানি গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ ত্বকের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও ত্বকের বলিরেখা, ব্রণ, কালচে বর্ণ দূর করে।
  • ত্বককে নমনীয় রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • নিয়মিত গাজর খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং চোখের ছানি পড়া রোধে সহায়তা করে।
  • গাজরে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হওয়ায় চুল পড়া রোধ করে, চুলকে মজবুত ও শক্ত করতে সহায়তা করে।
  • গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য গাজর খুবই উপকারী।
  • গাজর কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। আমরা দেখি শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির সমস্যা বেশি দেখা যায়। শিশুদের কৃমি দূর করতে গাজরের রস শিশুদেরকে পান করান দেখবেন কৃমি থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন।
  • গাজরে পটাশিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
  • এছাড়াও হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গাজর বেশি উপকারী।
  • গাজরের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • নিয়মিত গাজর খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেও গাজর বেশ উপকারী।
গাজরের অপকারিতা হল:
  • অতিরিক্ত পরিমাণ গাজর খেলে আমাদের দেহ হলুদ ও লাল বর্ণ ধারণ করতে পারে। ভয়ের কারণ নাই তেমন ক্ষতিকর না।
  • গাজর খেলে এলার্জি হতে পারে যার ফলে মুখ, কান চুলকাতে পারে। তবে রান্না করে খেলে তেমন সমস্যা হবে না।
  • গাজর দূষিত পরিবেশে চাষ এবং রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে আমাদের দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে তাই গাজর খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খাবেন।

গাজর চাষ পদ্ধতি

গাজর চাষ করার আগে এর পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরী। কেননা আপনি যদি ভালোভাবে বীজ এবং মাটি ও সার প্রয়োগ না করতে পারেন তাহলে ভালো উৎপাদন করতে পারবেন না এতে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

গাজরের জাত: কুরোদা সান্টিন, নান্টেস ইমপ্রুভ, নান্টেস সুপেরিয়র,কুড়োদা ম্যাঙ, নিউ কুরোদা ইত্যাদি।

গাজর চাষের সময়: গাজর চাষ করার উপযুক্ত সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এর মধ্যে উত্তম।

গাজর চাষ পদ্ধতি: গাজরের বীজ বপন করার আগে মাটি অনুযায়ী ৪-৬ টি চাষ করে নিতে হবে এবং মই দিতে হবে। শেষ মাঠে চাষ করার সময় সার প্রয়োগ করতে হবে। পানি সেচ, পরিচর্যা এবং পানির অপচয় রোধে বেড ও নালা পদ্ধতিতে চাষ করুন। বীজ বোনার সময় একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইন ৮-১০ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩-৭ ইঞ্চি দূরত্ব বজায় রেখে লাগাতে হবে। বীজের পরিমাণ হবে শতক প্রতি ২০ গ্রাম।

সারের ব্যবহার: শেষ চাষের সময় কি পরিমাণে শতক প্রতি সার ব্যবহার করবেন তা নিচে তুলে ধরা হলো;
ইউরিয়া - প্রতি শতক ৫০০ গ্রাম।
গোবর - প্রতি শতক ৪০ কেজি।
জিপসাম - প্রতি শতক ৬০০ গ্রাম।
ডিএপি - প্রতি শতক ৬০০ গ্রাম।
এমওপি - প্রতি শতক ৫০০ গ্রাম।

এবং গাজরের চারা রোপন করার ৩ সপ্তাহ পর ৮০-১০০ ইউরিয়া, ৮০-১০০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে জমিতে ব্যবহার করুন। এভাবে একই নিয়মে ৬ সপ্তাহ পর পুনরায় ইউরিয়া এবং এমওপি সার ব্যবহার করুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মাটির উর্বরতা এবং কন্ডিশন অনুযায়ী স্যারের ব্যবহার অনুপাতে কম বেশি হতে পারে।

জমিতে সেচ ও আগাছা দমন: জমিতে নিয়মিত পানি দিতে হবে যেন মাটির আদ্রতা নষ্ট না হয়। পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে। জমিতে বিভিন্ন ধরনের ঘাস হয়ে থাকে তা যথাযথ সময়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বিশেষ করে জমিতে পানি দেওয়ার আগে আগাছা গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

পোকামাকড় দমন ও রোগ নির্মূল: বীজ বপন করার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও রোগ লাগতে পারে। তাই এসব পোকামাকড় ও রোগ হতে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে কোন পোকা এবং কোন রোগের জন্য কি ওষুধ ব্যবহার করা প্রয়োজন তা সম্পর্কে জেনে পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে এসব কীটনাশক ব্যবহার করার সময় অবশ্যই সেফটি পোশাক ব্যবহার করতে হবে। এসব ওষুধ ব্যবহার করার সময় ধূমপান বা অন্যান্য পানাহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সংরক্ষণ: গাজর যখন সংরক্ষণ করবেন অবশ্যই শীতল ও ঠান্ডা অবস্থানে রাখতে হবে।

প্রতিদিন কতটুকু গাজর খাওয়া উচিত

আমরা সবাই জানি যে কোন ফল বা সবজি নিয়ম করে খাওয়া উচিত। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তাই গাজর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ১-২ টি খাওয়াই যথেষ্ট। আর যদি জুস করে খান তাহলে প্রতিদিন ১ গ্লাস করে খাবেন। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়া যাবে কি

অনেকেই আমাদের কাছে প্রশ্ন করে থাকেন যে গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়া যাবে? উত্তর হ্যাঁ।
গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়া ক্ষতিকর না। তাই নিশ্চিন্তে গাজর খেতে পারেন। গাজরের রস গর্ভ অবস্থায় পান করা উপকারী কারণ গাজর ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে। তাই বলা যায়, গর্ভাবস্থায়ও গাজরের রস পান করা উচিত।

সর্বশেষ মন্তব্য 

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা গাজর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। গাজর যেহেতু আমাদের ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী তাই নিয়মিত গাজর খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে মনে রাখবেন গাজর অনেক পুষ্টিকর হওয়ায় যে বেশি বেশি খাবেন এমন কিন্তু না। নিয়মিত ফলমূল শাকসবজি খান আপনার শরীরকে সুস্থ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url