বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে সংক্ষিপ্ত ৫০+ প্রশ্ন ও উত্তর
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বলা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এবং শ্রেষ্ঠ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন এই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে চাকরির ইন্টারভিউ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রত্যেকটি শ্রেণীতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলাদা অধ্যায় রয়েছে এবং পরীক্ষায় তাকে নিয়ে প্রশ্ন আসেই। এ সকল কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর জীবনী সহ তার সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়। আপনারা যারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব যা আপনাদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক,
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও পরিচয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির জনক। তার জন্ম ও পরিচয় আমাদের সকলকেই বিভিন্ন কারণে জানতে হয়। এমনকি একজন বাঙালি এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের জাতির জনকের জন্ম ও পরিচয় জানাটা আমাদের কর্তব্য। এই আর্টিকেলে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও পরিচয় সম্পর্কে জানব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ এবং ভারতের অন্তর্ভুক্ত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এই গ্রামটি বাইকার নদী তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং তার মাতার নাম সায়রা খাতুন। বঙ্গবন্ধুর বাবা মায়ের চার কন্যা ও দুই পুত্র ছিল এবং তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়তম। বঙ্গবন্ধুর বড় বোন ফাতেমা, মেজ বোনের নাম আসিয়া বেগম, সেজ বোনের নাম হেলেন এবং সবচেয়ে ছোট বোন এর নাম লাইলী খাতুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছোট ভাই ছিল যার নাম শেখ আবু নাসের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানার নাম শেখ আব্দুল মজিদ এবং বঙ্গবন্ধুর নাম শেখ মুজিবুর রহমান রাখেন তার নানা আব্দুল মজিদ। ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুকে খোকা বলে ডাকা হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ১৯২৭ সালে যখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর। এই সাত বছর বয়সে তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন এবং 9 বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয় তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন।
তারপর ১৯৩১ সালে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারেননি। পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে সুস্থ হওয়ার পর গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন এবং গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সাহায্য পরায়ণ একজন ব্যক্তি। অন্যের বিপদে তিনি সবসময় সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেন সবার আগে। পরবর্তীতে বাঙালি জাতির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার রোধ করার জন্য তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। অবশেষে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পিছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। তার জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক প্রভাবশালী মুসলিম পরিবারে। তার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং তার মায়ের নাম সাহারা খাতুন। তার বাবা-মায়ের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ছোটবেলায় তার বাবা-মা তাকে খোকা বলে ডাকতো এবং তার শৈশবকাল টুঙ্গিপাড়া গ্রামে কেটেছে। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ৭ বছর বয়সে ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলের মাধ্যমে।
১৯৩৮ সালে অর্থাৎ যখন তার বয়স ১৮ বছর তখন তিনি গোপালগঞ্জের মাথুরা নাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মাত্র আঠারো বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ফজিলাতুন্নেছার অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ফজিলাতুন্নেছার দুইটি মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা এবং তাদের তিনটি ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। তার মেয়ে শেখ হাসিনা বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, এমনকি তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন এই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংক্ষিপ্ত আকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু বলা হয়। এই মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
হয়তোবা তার মত একজন নেতা থাকার কারণেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়ই নয় বরং ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য কাজ করেছেন।
তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে প্রায় ১৮ বার জেলে গিয়েছেন। তিনি বাঙালি জাতির জন্য কি না করেননি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে নির্বাচন, ছয় দফা দাবি, ২৬ শে মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন সহ অসংখ্য আন্দোলন তিনি তিনি বাঙালি জাতির জন্য করেছেন।
সর্বশেষ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নকে তিনি পূরণ করেছেন। স্বাধীনতার পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে পূর্ণ গঠন করার জন্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির গর্ব এবং বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে আজীবন মনে রাখবে।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
বিভিন্ন প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ১০ টি বাক্য লিখতে হয় অথবা জানতে হয়। বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বাক্য লিখতে হয়। এসব কারণে অনেকেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বাক্য জানতে চায়। আপনারা যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বাক্য জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য নিচে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বাক্য তুলে ধরা হলো:
- ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।
- বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এবং মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
- বঙ্গবন্ধু ১৯২৭ সালে তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন।
- বঙ্গবন্ধু ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং তখন তার বয়স ছিল নয় বছর।
- বঙ্গবন্ধু ১৯৩৪ সালে বেরি বেরি রোগে আক্রান্ত হন।
- বঙ্গবন্ধু ১৯৩৪ সালে কলকাতায় তার চোখের অপারেশন করেন।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসুস্থতার কারণে শিক্ষা জীবনে চার বছর ঘাটতি হয়।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৩৮ সালে গোপালগঞ্জের মাথুরা নাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ বছর বয়সে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় বিবাহ করেন।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি একটি সাধারন নাম নয়। এটি বাঙালি জাতির জনকের নাম। এটি একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদের নাম। পরাধীনতার কবলে বন্দী থাকা জাতিকে স্বাধীনতার আলো দেখানো একজন সাহসী নেতার নাম হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, এমনকি তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন এই বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংক্ষিপ্ত আকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু বলা হয়। এই মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। হয়তোবা তার মত একজন নেতা থাকার কারণেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেট তথ্য প্রদান করেন।
তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ লীগের একজন সভাপতি, তারপর তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্তানের নির্যাতন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি দায়িত্ব পালন করার জন্য তার চরিত্রের কৃতিত্ব স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বাঙালি জাতির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তিনি বাংলার মানুষের বন্ধু হিসেবে ছিলেন এবং তার ফলস্বরূপ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব অথবা শেখ সাহেব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি অতীতের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই বিখ্যাত ব্যক্তি ১৯৭৫ সালে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়। তিনি বাঙালি জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং বাঙালি জাতি তাকে আজীবন মনে রাখবে।
বঙ্গবন্ধু মোট কতবার গ্রেফতার হন
বঙ্গবন্ধু কতবার জেলে গিয়েছেন বা গ্রেফতার হয়েছেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। আপনারা যারা বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার হওয়া নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য নিচে বঙ্গবন্ধু কতবার গ্রেফতার হয়েছেন এবং কি কারনে হয়েছেন তা তুলে ধরা হলো;
- লাহোর কনফারেন্সের কারণে ১৯৫০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে পাঠানো হয়।
- ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে তাকে জেলে পাঠানো হয়।
- চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
- ১৯৭৯ সালের জুন জুন মাসে গণমাধ্যমের আন্দোলনের সময় তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
- বিশেষ করে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে জেলে থাকতে হয়।
- এছাড়াও আরো ১২ বার তিনি জেলে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোট ১৮ বার জেলে গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের এক চতুর্থ অংশ কারাগারের মধ্যে কাটিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষা সহ শিক্ষার্থীদের ক্লাস ভিত্তিক পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অসংখ্য প্রশ্ন এসে থাকে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই এই সকল প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর খুজতেছেন। আপনারা যারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন তাদের জন্য নিচে বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর তুলে ধরা হলোঃ
মুজিব শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ মুজিব শব্দের অর্থ হলো উত্তর দাতা।
বঙ্গবন্ধু কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।
১৭ মার্চ কি দিবস হিসেবে পালিত হয়?
উত্তরঃ ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর ডাক নাম কি ছিল?
উত্তরঃ খোকা ছিল বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলার ডাক নাম।
বঙ্গবন্ধুর পিতার নাম কি?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধুর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর মাতার নাম কি?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধুর মাতার নাম সায়রা খাতুন
বঙ্গবন্ধু কোথায় প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেছিলেন?
উত্তরঃ গোপালগঞ্জ জেলার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর নাম কি?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর নাম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর ডাক নাম কি?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর ডাক নাম ছিল রেনু।
বঙ্গবন্ধু কোথা থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু বিএ ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে।
বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিক পাশ করেন কোন স্কুল থেকে?
উত্তরঃ গোপালগঞ্জ জেলার মাথারুনাথ ইনস্টিটিউট মিশনারি স্কুল থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিক পাস করেন।
বঙ্গবন্ধু কবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আইন বিভাগ।
বর্তমান সময়ে ইসলামিয়া কলেজের নাম কি?
উত্তরঃ বর্তমানে ইসলামিয়া কলেজের নাম মাওলানা আজাদ কলেজ।
বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় কোন হোটেলে থাকতেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বেকার হোস্টেলে থাকতেন।
বঙ্গবন্ধু কলকাতার বেকার হোস্টেলের কত নাম্বার কক্ষে থাকতেন?
উত্তরঃ ২৪ নম্বর কক্ষে।
বঙ্গবন্ধু কবে প্রথম জেলে গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু ১৯৩৮ সালে প্রথম কারাবরণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার জীবনের প্রথম কারাবরণ করে কতদিন ছিলেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু তার জীবনে প্রথম কারাবরণে ৭ দিন ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে কবে বহিষ্কার করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে বহিষ্কার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মুসলিম ছাত্রলীগ কবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৪৮ সালের 4 জানুয়ারি তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
কত তারিখে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই।
কত তারিখে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৮৬ সালের ১ এ মার্চ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের কততম কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন?
উত্তরঃ ষষ্ঠতম।
যুক্তফ্রন্ট সরকারের কোন মন্ত্রণালয় এবং বঙ্গবন্ধুর দায়িত্ব পান?
উত্তরঃ কৃষি, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
বঙ্গবন্ধু কবে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান?
১৯৫৪ সালের ১৫মে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
কবে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়?
উত্তরঃ ১ জানুয়ারি ১৯৬৮ ।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রকৃত নাম কি?
উত্তরঃ রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য হল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রকৃত নাম।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কতজন আসামি ছিল?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন।
বঙ্গবন্ধু কবে ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবি করেন।
শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন কে?
উত্তরঃ তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কবে বাংলাদেশ নামকরণ করেছিলেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামকরণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কবে জাতির জনক উপাধি পেয়েছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ।
বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ কবে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে কয়টি দাবি উপস্থাপন করেন?
উত্তরঃ চারটি।
বঙ্গবন্ধু কত তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ।
বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কখন গ্রেফতার করেন?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।
বঙ্গবন্ধু কত তারিখে দেশে ফিরেন?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে কবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল।
কে ছিলেন মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি?
উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা কার ছিল?
উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু কবিতার লেখক কে?
উত্তরঃ জসীমউদ্দীন।
কত তারিখে বঙ্গবন্ধু কবিতাটি লেখা হয়?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে কোন দেশে প্রথম এ গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে।
কত তারিখে বঙ্গবন্ধু ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফর করেছিলেন?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কোন কারাগারে বন্দী ছিল?
উত্তরঃ মিলান ওয়ালি কারাগার।
কত তারিখে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সাল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন বই লিখেছেন?
উত্তরঃ আমার পিতা শেখ মুজিব।
কবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়?
উত্তরঃ ১৯৯৭ সালের ১২মার্চ।
কত তারিখে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শেষ হয়?
উত্তরঃ ২৭ জানুয়ারি ২০১০ সাল।
কে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছিলেন?
উত্তরঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কে মুজিব বর্ষের লোগোর ডিজাইন করেছিল?
উত্তরঃ সব্যসাচী হাজরা।
মুজিব বর্ষের লগো উন্মোচন করেন কে?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
কত তারিখে মুজিব বর্ষের লোগোর উন্মোচন হয়?
উত্তরঃ ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি।
বঙ্গবন্ধুর কতজন হত্যাকারীর ফাঁসি হয়েছিল?
উত্তরঃ ৬ জন।
মুজিব ভাই বইটি কে লিখেছিলেন?
উত্তরঃ এবিএম মুসা।
শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেন কে?
উত্তরঃ ভিপি তোফায়েল আহমেদ।
বঙ্গবন্ধু কবে রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন?
১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে যখন তিনি পড়াশোনা করতেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ রচনা
ভূমিকাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে প্রভাবশালী একজন নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবথেকে ভয়ংকর এবং গৌরব উজ্জ্বল একটি যুদ্ধ। এক কথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে একে অপরের পরিপূরক হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য কঠোরভাবে সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূরণ হয়।
সমগ্র বাঙালি জাতি এবং বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নয় মাসের যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ রূপে অর্জিত হয়। এই মহান বিজয় বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তা অনেকটা অসম্ভব ছিল। এই অসম্ভব বিজয়ের পিছনে বঙ্গবন্ধুর ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দিকনির্দেশনা। এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি মুক্তিযুদ্ধের সময় না থাকতো তাহলে বাঙালি জাতি এত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারত না।
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং স্বাধীনতার মহান নেতা। তিনি সবসময় বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন। ১৯৪৮ সালের পর যখন ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান এবং ভারত আলাদা হয়ে যায় তারপর পূর্ব-পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। এই ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নির্যাতন শোষণ করা শুরু করে।
তখন থেকে বাঙালি জাতির একটি লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। সমগ্র বাঙালি জাতির তখন একমাত্র প্রয়োজন ছিল স্বাধীনতার এবং শেষ স্বাধীনতার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসংখ্য সংগ্রামে জড়িত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন যেমন ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ।
ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার যখন উর্দু কে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঘোষণা দেয় তখন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম আন্দোলন ও ছিল এই ভাষা আন্দোলন। এ ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।এবং সরাসরি এই আন্দোলনে জড়িত ছিলেন।
এ আন্দোলনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন সভা এবং সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন এবং ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছিলেন। পরবর্তীতে বাংলা ভাষা মাতৃভাষার মর্যাদা পায় এবং এই মাতৃভাষার মর্যাদা পাওয়ার পেছনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মুক্তির প্রথম সোপান, ভাষার বিজয়ঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যাদা দেওয়ার পর বাঙালি জাতির মধ্যে স্বাধীনতা প্রত্যাশী মনোভাব চলে আসে। এটি ছিল পাকিস্তানিদের নির্যাতন থেকে মুক্তির প্রথম সোপান। তারপর থেকে বাঙালি জাতি মুক্তির জন্য সভা-সমাবেশ মিছিল ও পদযাত্রায় অংশ নিয়ে জীবন দিয়ে দিয়েছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি তীব্র আন্দোলন শুরু করায় পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে সংবিধানে বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। এই জয়টি ছিল বাঙালি জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রথম জয়। পরবর্তীতে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রাণিত হয় এবং তারা ঐক্য হয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ছয় দফা দাবিঃ ছয় দফা দাবি ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে অন্যতম একটি আন্দোলন। এই দাবিতে ছিল বাঙালির সম্পূর্ণ মুক্তির দাবি। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি করেন। ছয় দফার দাবি তুলে ধরা হলোঃ শাসন কাঠামো এবং রাষ্ট্রের প্রকৃতি, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার দাবি, রাজস্ব কর ও শুলকর সম্বন্ধের ক্ষমতা দিতে হবে, অঞ্চলের সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে, মুদ্রা ও আর্থ সম্বন্ধীয় ক্ষমতা দিতে হবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক বিষয়ক ক্ষমতা দিতে হবে।
৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানঃ বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আন্দোলনের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হচ্ছে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ১৯৬৯ সালে বাঙালি জাতি চরম আন্দোলন শুরু করে এবং তার ফলস্বরূপ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইয়ুব খানের পতন হয়। এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ৬ দফা আন্দোলনের পর আগরতলা মামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার কারণে। বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে তারপর বাঙালি জাতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
ফলে সমগ্র বাঙালি জাতি বিভিন্ন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সমগ্র দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। এই আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির ঐক্য এবং শক্তি প্রদর্শনের একটি আন্দোলন। এই আন্দোলনে জয়লাভ করার পর শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়।
সত্তরের নির্বাচনঃ অনেক আন্দোলনের পর পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করে। এই নির্বাচনটি ১৯৭০ সালে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এবং পাকিস্তান সরকারের মুসলিম লীগ সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনের ফলাফলস্বরূপ জাতীয় পরিষদে আওয়ামীলীগ ১৬০ টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ও পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখায় অর্থাৎ অস্বীকার করে। তারপর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরো একটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
৭ মার্চের ভাষণঃ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়াদি উদ্যানে রক্ত জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন। মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এই ভাষণের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখ লাখ বাঙালির সামনে পাকিস্তানি সরকারের নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি এই আন্দোলনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সকল প্রকার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। এই ভাষণ এই তিনি বলেছিলেন,
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"
স্বাধীন দেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুঃ ১৯৭১ সালে ২৬ শে মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসের রক্ত হয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে বাঙালি জাতি অসহায় হয়ে পড়ে। তবুও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি বিনির্মাণে কাজ শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশ পূর্ণ গঠনের বঙ্গবন্ধু প্রথমে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার রাস্তা- ঘাট, সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কলকারখানা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পূর্ণ গঠন করতে শুরু করেন।
আস্তে আস্তে তিনি একটি দেশের সকল মৌলিক বিষয়ে পূর্ণ গঠন শুরু করেন। তিনি বৈদেশিক বাণিজ্যিক রপ্তানি বৃদ্ধি করেন এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির দ্রুত গতি বৃদ্ধি করে। এক কথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনরায় সোনার বাংলায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল এক আকাশ পরিমাণ।
১৫ আগস্ট এর কালো রাতঃ ১৯৭১ সালের পনেরো আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিষাক্ত কালো রাত। এ রাতে বাঙালি জাতি তাদের শ্রেষ্ঠ নেতাকে হারিয়েছিল। এই ঘটনা প্রত্যেকটি বাঙালির হৃদয়কে কাঁপিয়ে তুলেছিল। ১৫ আগস্ট নিরিবিলি রাতে কিছু সন্ত্রাসী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে আক্রমণ করে। যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এত কিছু করেছে সেই বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতার মায়া জালে পড়ে নোংরা কিছু বাঙালি হত্যা করে।
সেই সকল সন্ত্রাসীরা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে এই হত্যা করেছিল না, পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র পরিবারকে হত্যা করেছিল। এই কাল রাতে সকল সন্ত্রাসীরা ছয় বছরের ছোট বাচ্চা শেখ রাসেলকেও ছাড় দেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল সদস্যকে নৃসংসভাবে হত্যা করে। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর দুইটি মেয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা দেশের বাইরে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিল।
উপসংহারঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ, এই দুটোই বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং এই ব্যক্তি এবং অর্জনকে বাঙালি জাতি কখনো ভুলতে পারবেনা। এই বঙ্গবন্ধু নামক মহান নেতার ইতিহাস এবং বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন যা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন হয়েছে তা আজীবন বাঙালির হৃদয়ে গেথে আছে এবং থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর মত একজন সাহসী নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের মত একটি রক্তকয় যুদ্ধের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে আমাদের সকলের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন স্বাধীন জন্মভূমি বাংলাদেশ। তাই প্রত্যেকটি বাঙালিকে প্রতিজ্ঞা করা উচিত যে, এই স্বাধীনতাকে তারা কখনো বিফলে যেতে দিবে না এবং বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।
সর্বশেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠকগণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় একজন সাহসী এবং অকুতোভয় নেতা। একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। দেখা হবে পরবর্তী কোনো টপিক নিয়ে। ধন্যবাদ!
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url