চুলে মেহেদি পাতা লাগানোর নিয়ম
আমরা সকলেই মেহেদি পাতা সম্পর্কে জানি। কমবেশি সকলেই চুলে কখনো না কখনো মেহেদি পাতা ব্যবহার করেছি। কিন্তু অনেকেই চুলে মেহেদি পাতা লাগানোর নিয়ম সঠিক কোনটা সে সম্পর্কে জানেন না। যদি আপনিও না জানেন তাহলে চুলে মেহেদি পাতা লাগানোর নিয়ম আর্টিকেলটি পড়ুন। কালো চুলে মেহেদি দিলে কি হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
মেহেদি পাতার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করছি, আপনারা মেহেদি পাতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
মেহেদি পাতা
মেহেদি পাতা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। মেহেদি পাতা নখ, চুল ও পশম রঙিন করতে আমরা ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও মেহেদি পাতার রয়েছে বিভিন্ন রকম ঔষধি গুণ। মেহেদি গাছ একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। মেহেদি পাতাগুলো অনেক বেশি নমনীয় ধরনের হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাতাগুলো শক্ত প্রকৃতির হয়।
মেহেদি গাছের বয়স বাড়লে তাতে ফুল ও ফল দেখা যায়। মেহেদি গাছ গ্রীষ্ম মন্ডলীয় আবহাওয়ায় জন্মায়। মেহেদি পাতা আমাদের চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও মেহেদি পাতার রস আমাদের শরীরের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে।
কালো চুলে মেহেদি দিলে কি হয়
মেহেদিকে বলা হয়ে থাকে আমাদের চুলের জন্য প্রাকৃতিক রং। চুল পাকা হোক অথবা কালো উভয় চুলেই মেহেদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখন খুব অল্প বয়সেই অনেকের চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে। যা দেখতে খুব একটা ভালো দেখায় না। তাই অনেকেই সেই সাদা চুল রঙিন করতে মেহেদি পাতা ব্যবহার করে থাকে। আবার মেহেদি পাতার সাথে কিছু উপাদান মিস করে প্রাকৃতিক উপায়ে পাকা চুল কালো করার জন্য মেহেদি পাতা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কালো চুলে ও মেহেদি ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সাদা চুল রঙিন করার জন্য অথবা কালো করার জন্য পাকা চুলে মেহেদি ব্যবহার করা হয় কিন্তু কালো চুলে মেহেদি দিলে কি হয়। কালো চুলে মেহেদি ব্যবহার করলে কালো চুল হয়ে ওঠে আরো অনেক বেশি কালো এবং ঝলমলে। এছাড়াও চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে এবং চুল পড়া কমাতে মেহেদি পাতা অনেক বেশি সাহায্য করে। মেহেদি পাতা দিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে ব্যবহার করে আপনি অনেক উপকার পাবেন।
চুলের যত্নে সরিষার তেল ও মেহেদি
আমরা অনেকেই বিভিন্ন পদ্ধতিতে চুলে মেহেদি পাতা ব্যবহার করে থাকি। চুলে ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ যোগ করি ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য। চুলের যত্নে মেহেদি পাতা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের মেহেদি পাতার প্যাক চুলের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান করে থাকে। সেরকম একটি প্যাক হচ্ছে মেহেদি পাতার সাথে সরিষার তেল। মেহেদি পাতার সাথে সরিষার তেল ব্যবহার করে প্যাক তৈরি করা হয়ে থাকে চুল পড়া সমস্যা সমাধান করার জন্য।
চুল পড়া কমাতে মেহেদি পাতা ও সরিষার তেল অনেক বেশি সাহায্য করে। আপনার যদি চুল পড়ার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে তাহলে সপ্তাহে ২/৩ দিন সরিষার তেল ও মেহেদি পাতার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারের পরেই আপনার চুল পড়ার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এখন জেনে নিন চুলের যত্নে সরিষার তেল ও মেহেদি পাতার প্যাক কিভাবে তৈরি করবেন।
- প্রথমে একটি পাত্রে ২৫০ মিলি সরিষার তেল নিন।
- এবার সরিষার তেলের ভেতর কয়েকটি মেহেদি পাতা দিতে হবে।
- দুটি উপকরণ একসাথে ভালোভাবে ফোটাতে হবে।
- তেল এবং মেহেদি পাতা একসাথে গরম করার ফলে যখন তেলের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে তখন তেল নামিয়ে নিতে হবে।
- এবারে তেল ভালোভাবে ঠান্ডা করে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে হবে।
- সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এইভাবে ব্যবহার করতে হবে।
মেহেদি পাতা দিয়ে চুল কালার
অনেকেই রয়েছেন যারা কালো চুলের পরিবর্তে একটু লাল ধরনের চুল অনেক বেশি পছন্দ করেন। আর সেই কারণে পার্লারে গিয়ে অথবা সেলুনে গিয়ে কৃত্রিম উপায়ে চুলের রং পরিবর্তন করে থাকে। আবার অনেকের অল্প বয়সেই মাথার চুল অনেক বেশি সাদা হয়ে যায়। আর সেই সাদা চুল কৃত্রিম কালার দিয়ে পরিবর্তন করে থাকে। কিন্তু কৃত্রিম কালার ব্যবহার চুলের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। কৃত্রিম কালার ব্যবহারের কারণে চুলের বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে।
তাই কখনোই চুলে কৃত্রিম কালার ব্যবহার করা উচিত নয়। আপনিও যদি চুলের রং পরিবর্তন করতে চান তাহলে প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের রং পরিবর্তন করতে পারেন। প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের রং পরিবর্তনের একটি জনপ্রিয় উপাদান হচ্ছে মেহেদি পাতা। চুলের রং পরিবর্তন করার জন্য আপনি নিঃসন্দেহে মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চুলের রং পরিবর্তন হবে এবং চুলের উপকার ও হবে। মেহেদি পাতা দিয়ে চুল কালার কিভাবে করবেন জেনে নিন।
- কিছু পরিমাণ মেহেদি পাতা পাটায় অথবা ব্লেন্ডারে পিষে নিতে হবে।
- এবার পিষে রাখা মেহেদি পাতাগুলো ভালোভাবে চুলের গোড়া থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত গাঢ়ো করে লাগাতে হবে।
- চুলের সামনের দিকে সামান্য করে নারিকেলের তেল লাগিয়ে নিতে হবে যাতে করে সামনের দিকে মেহেদির রং না লেগে যায়।
- মেহেদি বাটা চুলে দুই থেকে ৬ ঘন্টা লাগিয়ে রাখতে হবে।
- তারপর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
চুলের গোড়া শক্ত করতে মেহেদি পাতা
আজকাল সকলের একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে চুল পড়া। অল্প বয়সেই চুল উঠে যেন মাথায় টাক দেখা দিচ্ছে। আর সেই কারণে অনেকেই অস্বস্তির সম্মুখীন হচ্ছে। চুল পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়া। চুলের গোড়া যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে খুব সহজেই চুল উঠে যায়। তাই যদি চুল পড়া রোধ করতে চান তাহলে চুলের গোড়া শক্ত করতে হবে। চুল পড়া কমাতে অনেকেই অনেক ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে। চুল পড়া কমাতে কিংবা চুলের গোড়া শক্ত করতে মেহেদি পাতার ভূমিকা অনেক বেশি।
মেহেদি পাতা প্রাকৃতিক উপাদান। যা ব্যবহারের ফলে আপনার চুলের ত্বক অনেক বেশি সুন্দর হয় এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়ে চুল পড়া রোধ করে। তাই আপনি আপনার চুল পড়ার সমস্যা সমাধান করতে মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। মেহেদি পাতা বেটে চুলে মোটা করে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দিন। এতে করে আপনার চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুল দেখতে অনেক বেশি সুন্দর হবে।
চুলের যত্নে মেহেদি পাতার ভূমিকা অনেক বেশি। মেহেদি পাতায় উপস্থিত থাকা প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করার পাশাপাশি মাথা ঠান্ডা রাখতে ও অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই যদি আপনার মাথায় তাপ উঠার মত সমস্যা থাকে তাহলেও আপনি মেহেদি পাতা বাটা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে অনেক উপকার পাবেন।
চুলে মেহেদি পাতা লাগানোর নিয়ম
চুলের যত্নে মেহেদি পাতার ভূমিকা অনেক বেশি তা আমরা সকলেই জানি। চুলের যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে নিঃসন্দেহে আপনি মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু মেহেদি পাতা ব্যবহারের ও কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি সেই সকল নিয়ম মেনে মেহেদি পাতা চুলে ব্যবহার করেন তাহলে যাদুকরী কার্যকরী তা দেখতে পাবেন।
চুলের ঘনত্ব বাড়াতে, চুলের গোড়া শক্ত করতে, সাদা চুল কালার করতে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যই আমরা মেহেদি পাতা ব্যবহার করে থাকি। এক এক রকমের সমস্যা সমাধানের জন্য মেহেদি পাতার সাথে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান মিশাতে হয় তাহলে এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়। আপনাদের সামনে চুলে মেহেদি পাতা লাগানোর নিয়ম গুলো আলোচনা করলাম।
সাদা চুল রং করতে মেহেদি পাতাঃ একটি পাত্রে কিছুটা পরিমান কফি ও পানি নিয়ে তা গরম করতে হবে। এবার গরম করা পানিগুলো ঠান্ডা করতে হবে। তার ভেতর মেহেদি গুঁড়ো ও কফি মিশিয়ে ঘন করে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এবার এই পেস্ট টি চুলে প্রয়োগ করুন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে মেহেদি পাতাঃ আমরা সকলেই চাই আমাদের চুল যেন অনেক বেশি ঘন এবং সুন্দর দেখায়। চুল ঘন থাকলেও একটা সময় পর আমাদের চুল পড়ে চুল অনেক পাতলা হয়ে যায়। তাই আপনি যদি চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে চান তাহলে প্রতি সপ্তাহে একবার মেহেদি বাটা চুলে ব্যবহার করতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যেই দেখবেন আপনার চুল অনেক বেশি ঘন হয়ে উঠেছে।
চুলের খুশকি দূর করতে মেহেদি পাতাঃ আমাদের চুলের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে খুশকি। বিশেষ করে শীতকালে যেন এর অতিরিক্ত মাত্রা বেড়ে যায়। আর সেই কারণে আমাদের চুল এবং চুলের গোড়া অনেক বেশি রুক্ষ শুষ্ক দেখায়। বাজারে আজকাল খুশকি দূর করার অনেক ধরনের প্রোডাক্ট বের হয়েছে কিন্তু সে সকল প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে হতে পারে চুলের ক্ষতি। তাই প্রাকৃতিকভাবে চুলের খুশকি দূর করতে চাইলে মেহেদি পাতা সবার ঊর্ধ্বে। মেহেদি পাতার সাথে কয়েকটি আমলকি পিষে চুলে ব্যবহার করলে খুব সহজেই আপনার খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
চুলের বৃদ্ধিতে মেহেদি পাতাঃ আপনার যদি লম্বা চুল স্বপ্ন হয়ে থাকে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণ করবে মেহেদি পাতা। মেহেদি পাতা ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি আপনার চুল লম্বা করতে পারবেন। একটি পাত্রে কিছুটা পরিমাণ সরিষার তেল নিন। এবার সেই তেলের ভেতর কয়েকটি মেহেদি পাতা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে ফুটে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে তেলের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে। এবার তেল ঠান্ডা করে নিয়ে চুলের গোড়ায় দিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে খুব দ্রুত আপনার চুল লম্বা হবে।
চুল কালার করতে মেহেদি পাতাঃ চুলের রং পরিবর্তন অথবা চুল কালার করা যদি আপনার স্বপ্ন হয়ে থাকে কিন্তু কৃত্রিম রং ব্যবহারে ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে ব্যবহার করতে পারেন মেহেদি পাতা। মেহেদি পাতা ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি আপনার চুলের রং পরিবর্তন করতে পারবেন। মেহেদি পাতা বেটে চুলে গাঢ় করে দুই থেকে ছয় ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুলের রং হালকা লাল বর্ণের হয়ে যাবে।
মেহেদি পাতার অপকারিতা
গাছের মেহেদি পাতা যা প্রাকৃতিক উপাদান। সেই মেহেদি পাতা বেটে চুলে ব্যবহার করলে এর কোন অপকারিতা দেখা যায় না। যদি কারো মেহেদি পাতায় এলার্জি থাকে তাহলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া মেহেদি পাতা ব্যবহারের ফলে কোনরকম ক্ষতি হওয়া কিংবা সাইড ইফেক্ট হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় না। কিন্তু অনেকেই মেহেদি পাতা বাটা অনেকটা ঝামেলা মনে করে তাই বাজার থেকে মেহেদির গুড়া কিনে নিয়ে এসে ব্যবহার করে।
বাজার থেকে কিনে আনা মেহেদি গুঁড়া ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। কারণ বাজারে যে যে সকল মেহেদি গুড়া পাওয়া যায় তাতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মেশানো থাকে। তাই সেই কেমিক্যাল যুক্ত মেহেদি গুড়া আমাদের চুলের উপকারের চাইতে অপকার করে বেশি। বাজারে কেমিক্যাল যুক্ত মেহেদি গুড়া ব্যবহার না করে গাছের মেহেদি পাতা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার চুলের কোন ক্ষতি হবে না এবং চুলের স্বাস্থ্য হবে অনেক সুন্দর।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করছি চুলে মেহেদি পাতা লাগানোর নিয়ম আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা মেহেদি পাতার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আপনারা যদি সঠিক নিয়মে এবং সঠিক উপাদান মিশিয়ে মেহেদি পাতা চুলে নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে আপনাদের চুলের সকল ধরনের সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। চুলের সমস্যার সমাধান করতে কৃত্রিম উপায় নয় প্রাকৃতিক উপায় বেছে নিন।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url