মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগের ঔষধ
আপনারা মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগের ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে মরিচের পাতা কোকড়ানো থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মরিচের বিভিন্ন রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আজকের লেখাটি মনোযোগ সহ পড়ুন।
এছাড়াও কিভাবে মরিচ চাষের জন্য সার প্রয়োগ করতে হয় এবং কি নিয়মে মরিচ চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় তা সম্পর্কে আমরা আজকের লেখার মাধ্যমে আলোচনা করবো।
মরিচের মাকড় দমন
অত্যন্ত কমন একটি রোগ হচ্ছে মরিচের মাকড়। এটি বহুভোজী পোকা। এই পোকা গুলো দলবদ্ধ ভাবে পাতার নিচে অবস্থান করে যা খালি চোখে দেখা খুবই কষ্টকর। এই রোগ সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক পোকা গাছের কোষগুলোকে ছিদ্র করে রসগুলোকে শোষণ করে থাকে এবং বিষাক্ত পদার্থ নিঃসৃত করে। যার ফলে গাছে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। পানির যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া রয়েছে তা বিঘ্নিত ঘটে।
এছাড়াও পাতা কুকড়ে যায় সাথে নিচের দিকে বেঁকে যায়, ফ্যাকাশে হয়, পাতা দেখতে চামড়ার মত হয়, শিরা গুলো মোটা হয় ইত্যাদি। যার কারণে গাছে গ্রোথ কমে যায়, আকারে ছোট হয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ থেকে ফুল ঝরে পড়ে যায়। এতে ফলগুলো অপরিপক্ক ও বিকৃত হয়। এ রোগ থেকে পরিত্রাণ এতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে। তাহলে মরিচের মাকড় দমন করা সম্ভব হবে।
- প্রথমে যা করতে হবে যখন ফল সংগ্রহ করবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করবেন যেন ফল উত্তোলনকারীর কাপড় এবং শরীর দ্বারা আক্রান্ত গাছ থেকে অন্যান্য গাছে ছড়িয়ে না যায়। এর আক্রমণ কমাতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
- সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
- মাকড় দমন করতে ডিটারজেন্টযুক্ত পানি স্প্রে করে দিতে হবে।
- যেহেতু মাইটগুলো পাতার নিচে দিকে লক্ষ্য করা যায় তাই স্প্রে করার সময় পাতার নিচের অংশ যেন সম্পূর্ণভাবে ভিজে যায়।
- একই জমিতে বার বার মরিচ চাষ করবেন না।
- জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- প্রথম অবস্থায় মাইট দমন করতে ১০ লিটার পানির সাথে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রথমবার স্প্রে করার পর আবার এক সপ্তাহ পর স্প্রে করতে হবে।
- যদি দেখেন আক্রমণের মাত্রা খুবই বেশি তাহলে মাকড়নাশক ব্যবহার করতে হবে। যেভাবে ব্যবহার করবেন তা হলো ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম থিয়োভিট বা ক্যালথেন মিশ্রণ করে স্প্রে করতে হবে। প্রথমবার করার ৩ দিন পর আবার স্প্রে করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে ৭ দিন পর আবার স্প্রে করতে হবে।
মরিচের রোগ ও প্রতিকার
মরিচ অতি প্রয়োজনীয় এবং প্রধান মসলা জাতীয় একটি ফসল। মরিচে রয়েছে ভিটামিন সি ও অন্যান্য উপাদান। মরিচ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, সালাত, সবজি সহ তরকারিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু মরিচে বিভিন্ন ধরনের রোগ আক্রমণ করার ফলে এর সঠিক উৎপাদন বিঘ্নিত ঘটে। যার কারণে মরিচ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তবে এসব রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে এর প্রতিকার করা খুব সহজ হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই, মরিচের বিভিন্ন রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে।
- ফিউজারিয়াম ঢলে পড়া।
- ক্ষত, আগা মরা, ফল পচা।
- ঢলে পড়া বা গোরা ও মূল পচা।
- অলটারনারিয়া ফল পচা।
- চুয়ানিফোড়া পাতা পচা।
- পাতা কোকড়ানো।
- সারকোস্পোরা পাতায় দাগ।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত ফল পচা।
ফিউজারিয়াম ঢলে পড়াঃ এই রোগ গাছের গোড়ার কাণ্ডে আক্রমণ করে থাকে এবং গারো বাদামি ও ডুবা ধরনের কেঙ্কার সৃষ্টি করে।গাছের অর্ধেক অংশ হলুদ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা পুরো গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। যদি মাটি স্যাঁতসেঁতে হয় তাহলে গাছের গোড়া সাদা অথবা নিলাভ ছত্রাক স্পোর দ্বারা আবৃত হয়। এই রোগ থেকে প্রতিকার পেতে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা হল;
- মরিচ চাষ করার জন্য উঁচু জমি নির্ধারণ করতে হবে।
- চারা যেন রোগমুক্ত হয় তা খেয়াল করতে হবে।
- জমিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
- যদি সম্ভব হয় তাহলে ফরমালিন দ্বারা মাটি শোধন করে নিতে হবে।
- প্রতি কেজি বীজের জন্য প্রোভেক্স ২০০ বা ব্যভিস্টিন ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
- যে গাছে আক্রমণ করে সে গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এবং
- আক্রান্ত গাছে ব্যভিস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
ক্ষত, আগা মরা, ফল পচাঃ এই রোগ বীজ এবং গাছের পরিত্যক্ত অংশের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এছাড়াও অধিক বৃষ্টিপাত এবং আদ্র আবহাওয়ার কারণেও এ রোগ সরাতে সহায়তা করে। এ রোগ থেকে প্রতিকার পেতে-
- বীজ সংগ্রহ করতে হবে সুস্থ সবল ফল থেকে।
- পানি যেন জমিতে জমা হয়ে না থাকে তা খেয়াল করতে হবে।
- জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- প্রতি কেজি বীজের জন্য প্রোভেক্স ২০০ বা ব্যভিস্টিন ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
- এই রোগ দেখা মাত্রই টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিমিটার হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
ঢলে পড়া বা গোরা ও মূল পচাঃ এই রোগ অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে থাকে। এই রোগ সাধারণত নার্সারিতে বেশি দেখা যায়। এই রোগ মাটি ও পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এই রোগের প্রতিকার পেতে-
- উঁচু জায়গায় বীজ বপন করতে হবে।
- বীজ বপনের ঠিক ২ সপ্তাহ আগে ফরমালডিহাইড দ্বারা ফসলি জমি শোধন করে নিতে হবে।
- প্রতি কেজি বীজের জন্য প্রোভেক্স ২০০ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
- যদি পারেন তাহলে গরম পানিতে ৩০ মিনিট রেখে শোধন করে তারপর বপন করতে পারেন।
- পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অলটারনারিয়া ফল পচাঃ এই রোগ সাধারণত বীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
- সুস্থ ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়াও গাছের পরিত্যক্ত অংশ ও আগাছা একত্রিত করে ধ্বংস করতে হবে।
- প্রতি কেজি বীজের জন্য প্রোভেক্স ২০০ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
- পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- রোগ আক্রমণ করলে রোভরাল ২ গ্রাম নিয়ে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে তা ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
চুয়ানিফোড়া পাতা পচাঃ এই রোগ সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় এবং স্যাতসেতে আবহাওয়ায় এ রোগ হয়ে থাকে। এছাড়াও বায়ু দ্বারা এ রোগ বেশি বিস্তার ঘটায়।
প্রতিকারঃ
- গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- বেশি বেশি জমিতে সেচ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- এ রোগ আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানির সাথে ব্যভিস্টিন ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। এভাবে ৩-৪ বার স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
পাতা কোকড়ানোঃ এই রোগ খুবই কমন একটা রোগ। এই রোগ সাধারণত বাহক পোকা ও পোষক উদ্ভিদের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
- সুস্থ সবল গাছের ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- বীজ বপনের আগে ভালোভাবে জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।
- আক্রান্ত গাছ ও আশেপাশের বিভিন্ন উদ্ভিদ তুলে ফেলতে হবে। এবং
- চারা অবস্থা থেকে শুরু করে মেলাথিওন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
সারকোস্পোরা পাতায় দাগঃ এই রোগ বীজ, গাছের পরিত্যক্ত অংশের জীবাণু এবং পানির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এই রোগ সাধারণত ৬০% এর বেশি আদ্রতা ও ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
- সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- রোগ থেকে মুক্তি পেতে একই জমিতে বার বার মরিচ চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ফসলে বেশি বেশি সেচ দেওয়া যাবে না।
- পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- আক্রান্ত গাছ ও অন্যান্য আবর্জনা করে ফেলতে হবে।
- ১ কেজি বীজে ব্যভিস্টিন ২-২.৫ গ্রাম নিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। এবং
- যদি এই রোগে আক্রমণ করে তাহলে ব্যভিস্টিন ১ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিহারে মিশ্রণ করে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। এভাবে .২-৩ বার স্প্রে করলেই হবে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত ফল পচাঃ এই রোগ বিভিন্ন কারণে ছড়ায়। যেমন-গরম ও আদ্র আবহাওয়া, বৃষ্টি, পোকামাকড় ও বিভিন্ন উদ্ভিদ এর মাধ্যমে হয়।
প্রতিকারঃ
- সুস্থ সবল গাছ ও ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- যখন এ রোগে আক্রান্ত হবে তখন আক্রান্ত অংশ যেমন- লতা পাতা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।
- এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে কপার অক্সিক্লোরাইড মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
- এ রোগ যেহেতু মরিচ সংগ্রহের পর বেশি হয়। এজন্য খুব যত্ন সহকারে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- প্রথম অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে সানভিট এক গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়
যেহেতু মরিচ আমাদের প্রতিদিনের খাবারের সাথে প্রয়োজন পড়ে সেজন্য এর চাহিদা অনেক বেশি থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু অনেক কৃষক আছেন যারা সঠিক তথ্য না জানার কারণে ফলন বেশি ফলাতে পারে না। এজন্য অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর যদি মরিচ চাষ সঠিক পদ্ধতি অনুসারে করা হয় তাহলে অবশ্যই ফলন বৃদ্ধি পাবে। তাহলে চলুন, মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
- সঠিক সময়ে মরিচ চাষ করতে হবে।
- উঁচু স্থান নির্ধারণ করতে হবে।
- মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
- একই জমিতে বার বার মরিচ চাষ করবেন না।
- জমি নির্ধারণ করার পর মাটির শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য গবর ব্যবহার করতে হবে। এর সাথে ফসফরাস পটাশ দিতে হবে।
- জমিতে যেন মরিচের রোগ সৃষ্টিকারী অন্যান্য উদ্ভিদ ও বিভিন্ন কাগজের টুকরা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- সুস্থ সবল গাছ ও ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- চারা অবস্থা থেকে শুরু করে মেলাথিওন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- সারিবদ্ধভাবে চারা রোপন করতে হবে যেন সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে সারির দূরত্ব যেন ৬০-৭০ সেন্টিমিটার হয় এবং চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সেন্টিমিটার।
- মরিচের চারা সব সময় বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
- মরিচ গাছে যখন ফুল আসবে তখন স্প্রে ব্যবহার করুন।
- বীজ বপন করার পর নিয়মিত সেচ দিতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- মরিচের অনেক রোগ দেখা যায়। যেমন-মরিচের পাতা কোকড়ানো। এছাড়া অন্যান্য অনেক রোগ আছে যখন দেখা দিবে তখন অবশ্যই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করবেন।
মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগের ঔষধ
অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে মরিচ গাছের পাতাগুলো কুঁকড়ে গেছে। আর সেই কুঁকড়ে যাওয়ার কারণে গাছের ফলন অনেক বেশি কমে যায়। মরিচ গাছের পাতা এভাবে কুঁকড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বেগমো ভাইরাস। মরিচ গাছ বেগমো ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। এটি প্রাথমিক অবস্থায় অল্প থাকলেও আস্তে আস্তে পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের সমাধান করা খুবই জরুরী।
কারণঃ
- মরিচ গাছ বেগমো ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গাছের পাতার চারপাশ কুঁকড়ে যায়।
- এক ধরনের সাদামাছি রয়েছে যে সকল মাছির মাধ্যমে এই ভাইরাস এক গাছ থেকে গেছে ছড়াই।
- সাদা মাছি বাতাসের সাথে যতদূর উড়ে যেতে পারে ততদিন পর্যন্ত এই ভাইরাস ছড়ায়।
- মাঝে মাঝে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের কারণেও এই সমস্যা দেখা দেয়।
- এছাড়াও কোন একটি চারা সংক্রমিত থাকলে সেই জায়গা থেকে সকল গাছে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
লক্ষণঃ
- মরিচ গাছের বৃদ্ধি অনেকটা কমে যায়।
- মরিচ গাছের পাতাগুলোর চারপাশ কুঁকড়ে ছোট হয়ে যায়।
- মরিচ গাছের ফলের আকৃতি ছোট হয় এবং একসাথে অনেকগুলো ফল ধরে।
- যে সকল পাতার বয়স অনেক বেশি থাকে সেই সকল পাতাগুলো ঝরে যায়।
- মরিচ গাছের পাতার শিরা গুলো হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।
মরিচের রোগের ঔষধঃ
কিছু কিছু ঔষধ রয়েছে যে সকল ঔষধ প্রয়োগ করে আপনি এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন-
- এই ভাইরাসের আক্রমণ বেশি দেখা দিলে ওমাইট ৫৭ ইসি ১ লিটার পানিতে ২.০ মিলি ভালোভাবে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে।
- অনেক সময় দেখা যায় যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত গাছে ও নতুন পাতা গজায় ও নতুন ফুল ধরে। এ সকল ফুলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনি ১৫ দিন পর পর ২গ্রাম রিডোমিল গোল্ড ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিনের শেষের দিকে গাছে স্প্রে করতে পারেন।
- প্রথম অবস্থায় এরকম পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেন।
- এছাড়াও ট্রিকস ৫ গ্রাম ও নিম তেল ৫ মিলি এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে মরিচ গাছের পাতায় স্প্রে করতে পারেন।
- এক লিটার পানিতে সালফার জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে মরিচের গাছে ১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন এটি প্রয়োগ সূর্য ডোবার পর প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ আপনার মরিচ গাছে এরকম সমস্যা দেখা দিলে আপনি উপরোক্ত ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়াও আরো কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনি আপনার মরিচের গাছের এ ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারেন। যেমন-
- এ ধরনের ভাইরাস ছড়ায় সাদা মাছির দ্বারা তাই এ ধরনের মাছে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ ধরনের জাল ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি আপনার মরিচের জমির চারপাশে ভুট্টা অথবা জোয়ার জাতীয় ফসল চাষ করতে পারেন। এতে করে এই ভাইরাসের উপদ্রব কম হবে।
- প্রাথমিক অবস্থায় যে সকল গাছে এই সমস্যা দেখা দিবে সেই সকল গাছ তুলে ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।
- সাদামাছি আটকানোর জন্য কিছু ফাঁদ তৈরি করুন।
- আপনার জমিতে উপকারী পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন।
- শেষ পর্যায়ে সব ফসল তুলে নিয়ে জমিতে গভীর ভাবে চাষ করুন এবং আক্রান্ত গাছগুলো পুড়িয়ে ফেলুন।
মরিচ গাছে সার দেওয়ার নিয়ম
মরিচের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য মরিচ গাছে সার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি সঠিক নিয়মে সার দিতে না পারেন তাহলে ভালো ফলন পাবেন না। এজন্য যারা মরিচ চাষ করতে আগ্রহী আপনারা অবশ্যই সঠিক নিয়মে সার দেওয়া সম্পর্কে জানতে হবে। মরিচ গাছে সঠিক নিয়মে সার দেওয়ার পদ্ধতি হল; প্রতি হেক্টর জমিতে-
- ১০ টন গবর।
- ইউরিয়া ২৫০ কেজি।
- এমওপি সার দেড়শ কেজি।
- টিএসপি ২০০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। এবং
জমি তৈরীর সময়-
সম্পূর্ণ গবর, টিএসপি ও এমওপি সার ৫০ কেজি করে প্রয়োগ করা হয়।
চারা রোপনের ২৫ দিন পর থেকে-
- ইউরিয়া ৮৪ কেজি।
- এমওপি ৩৪ কেজি প্রথম অবস্থায় দিতে হয়।
চারা রোপনের ৫০-৭০ দিন পর্যন্ত
- সারা রোপনের ৫০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং ৭০ দিন পর তৃতীয়বার একই পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হয়।
কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী
উপজেলা কৃষি অফিসার আদমদিঘী বগুড়া।
মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায় কেন
মরিচ চাষ করার সময় লক্ষ্য করা যায় যে মরিচ গাছে অনেক ফুল ধরেছে আর সেই ফুল ঝরে পড়েছে। মরিচ গাছে ফুল এসে ঝরে পড়া এটি কোন সাধারণ বিষয় নয়। মরিচ চাষ করার সময় বিভিন্ন রকম ভুল ব্যবস্থার কারণে এরকম সমস্যা হতে দেখা যায়। তাই আপনি যদি একজন লাভবান মরিচ চাষী হতে চান তাহলে এরকম সমস্যা হলে আপনাকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
কারণ মরিচের ফুল থেকে ফল হয়। তাই যদি মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায় তাহলে ফলন ও কম হবে। এখন জেনে নিন কি কি কারণে মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায় এবং এ ধরনের সমস্যার সমাধান কি।
কারণঃ
- মরিচ গাছের গোড়ায় যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি জমে থাকে তাহলে মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায়।
- কিছু কিছু জমিতে চাষিরা বোরণ সার প্রয়োগ করে না আর সেই কারণেও মরিচের ফুল ঝরে যায়।
- গাছে ফুল ধরার পর যদি সে জমিতে সার প্রয়োগ করা হয় তাহলে ফুল ঝরে যায়।
- যে সকল ফুল পরাগায়ন হতে পারে না সেই সকল ফুল ঝরে যায়।
- অতি বৃষ্টির কারণে যদি জমিতে পানি জমে থাকে তাহলে মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায়।
- অনেক সময় দেখা যায় দিনের বেলা প্রচন্ড গরম ও রাত্রেবেলা প্রচন্ড ঠান্ডা হয়। যেমন দিনে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং রাতের বেলা ১৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা যদি এমন হয় তাহলে মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায়।
- কিছু কিছু পোকা রয়েছে যে সকল পোকা খালি চোখে দেখা যায় না সেই সকল পোকার আক্রমণ যদি জমিতে বেশি হয় তাহলে মরিচ গাছের ফুল ঝরে যায়।
প্রতিকারঃ
- মরিচ গাছের গোড়াই বেশি পরিমাণে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
- বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে জমি থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- জমিতে যদি বেশি পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় তাহলে সেই কীটনাশক ঔষধের প্রয়োগে উপকারী পোকা মরে যাই। আর সেই কারণে জমির ফুল পরাগায়ন হতে পারে না। তাই বুঝে শুনে পরিমাপ মত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- মরিচ চাষ করার জন্য বেলে দোআঁশ মাটির জমি নির্বাচন করতে হবে।
- জমিতে অপকারী পোকার দমন কমাতে ইমিডাক্লোপ্রিড স্প্রে ১ মিলি জমিতে স্প্রে করতে হবে।
- জমিতে বোরণ সার প্রয়োগ করতে হবে।
- ফুল ঝরে পড়া রোধ করার জন্য জিব্রেলিক সাত দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে আর দিনে তিন থেকে চারবার প্রয়োগ করতে হবে।
কিছু করণীয়ঃ মরিচ গাছের ফুল ঝরে পড়া রোধ করার জন্য আপনাকে কিছু করণীয় মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
- যে জমিতে মরিচ চাষ করবেন সেই জমির মাটি পরীক্ষা করার পর সার ব্যবহার করতে হবে।
- জমিতে সব সময় সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা বাসায় অথবা বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ করবেন তখন অবশ্যই মরিচ চাষ বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে চাষ করবেন। এতে আপনাদের ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম থাকবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। আশা করছি, আমাদের আজকের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে মরিচের বিভিন্ন রোগ ও কিভাবে চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন এবং আপনারা উপকৃত হবেন।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url