হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায় জেনে নিন
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়আপনার কি হেপাটাইটিস বি পজেটিভ ধরা পড়েছে? আর সেই কারণে কি আপনি অনেক বেশি চিন্তিত। যদি এমনটা হয় তাহলে চিন্তিত না হয়ে আমার লেখা হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায় আর্টিকেলটি পড়ুন। আমি হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায় এই আর্টিকেলে হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হলে করণীয় ও হেপাটাইসিস বি নেগেটিভ করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
যেহেতু হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত মারাত্মক ব্যাধি যা সব বয়সী মানুষদের হয়ে থাকে। তাই হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে প্রত্যেকটা মানুষেরই জানা এবং সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরী। বিস্তারিত জেনে নিন সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে।
হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক সংক্রমণ ব্যাধি। এই হেপাটাইটিস বি ভাইরাস লিভার কে আক্রমন করে এবং লিভারের ক্ষত সৃষ্টি করে। এই সংক্রমণ সাধারণত স্বল্প সময় থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি এর প্রাদুভার্ব বেশি লক্ষণ করা যায়। এ ভাইরাস মানুষের শরীরের রক্ত, লালা, যোনী তরল ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে বাংলাদেশে ইনজেকশন এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও বাবা - মা এর মাধ্যমেও সন্তানদের হতে পারে। হেপাটাইটিস বি এর বিভিন্ন উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, শরীর দুর্বল হওয়া, চোখ ও প্রসাব ভালো হওয়া ইত্যাদি।
তীব্র হেপাটাইটিস বি এর তিনটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো হল;
- প্রোড্রোমাল ফেজ।
- আইক্টেরিক ফেজ।
- কনভ্যালেসেন্স ফেজ।
হেপাটাইটিস বি কি ভাল হয়
আপনারা অনেকেই হয়তো হেপাটাইটিস বি এই রোগের নাম কোথাও না কোথাও শুনেছেন। কিংবা আপনাদের চেনা জানা কোন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর সেই কারণে আপনাদের মনে প্র জাগতেই পারে হেপাটাইটিস বি কি ভালো হয়? হেপাটাইটিস বি এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ বলা যেতে পারে। এ রোগের সঠিক চিকিৎসা না করা গেলে এর শেষ পরিণতি মৃত্যু। তাই অবশ্যই যদি কোন ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হয় তাহলে তাকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হেপাটাইটিস বি যদি কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হয় তাহলে কি তার এই রোগ কখনোই ভালো হবে না। হেপাটাইটিস বি যদি কোন ব্যক্তির শরীরে পজিটিভ হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনরকম চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। বিনা চিকিৎসাতেই জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যে সকল ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় হেপাটাইটিস বি পজেটিভ ধরা পড়লেও কিছুদিন পর তা নেগেটিভ হয়ে যায়।
কারণ আমাদের শরীর এক ধরনের অ্যান্টি বডি সৃষ্টি করে যা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে তা ধ্বংস করে ফেলে। কিন্তু কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হয় না তখন সেই ব্যক্তির বড় ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন লিভার ক্যান্সার ও সিরোসিস এর মতো রোগে রূপান্তরিত হতে পারে। হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্তর সংখ্যা নির্ণয় করতে গেলে বলা যেতে পারে যে জন্মের সময় ৯০% শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয় আর পাঁচ বছরের উর্ধ্বে ১০% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
যে সকল শিশু জন্মের সময় হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু যে সকল ব্যক্তি পূর্ণ বয়স্ক বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হয় তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগ ক্ষণস্থায়ী হয়।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ বা উপসর্গ বোঝা যায় না। সাধারণত হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের প্রায় ১-৪ মাস পর লক্ষণ গুলি সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো নাও দেখা যেতে পারে। যেহেতু হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সেহুত এর লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রতিটা মানুষের জন্য প্রযোজ্য। তাহলে চলুন জেনে, হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ গুলো কি কি। লক্ষণগুলো হল;
- হালকা জ্বর।
- পেট ব্যথা।
- মাংসপেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা।
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- প্রসাব গাঢ় হওয়া।
- খাবারে অরুচি।
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা।
- চোখ ও ত্বকের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করা। পরবর্তীতে জন্ডিস হতে পারে।
- হেপাটাইটিস বি গুরুতর আকার ধারণ করলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয়
অনেকেই হেপাটাইটিস বি পজিটিভ ধরা পড়লে টেনশনে পড়ে যান। হেপাটাইটিস বি যদি কোন ব্যক্তির শরীরে ধরা পড়ে তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য এটি খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায়। কারণ যে কোন ভালো চাকরির ক্ষেত্রে অথবা বিদেশে যাত্রার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে এটি দাঁড়ায়। কারো যদি পজেটিভ ধরা পড়ে তাহলে সেই ব্যক্তিকে বাইরের দেশে যেতে দেওয়া হয় না এবং কোন ভালো জায়গায় চাকরির ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার
তাই কোন ব্যক্তির হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব তা নেগেটিভ করার চেষ্টা করতে হবে। হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ কোন ব্যক্তির মাঝে খুব দ্রুত প্রকাশ পায় না। অনেক সময় দেখা যায় এর লক্ষণ প্রকাশ অনেক দেরিতে পাচ্ছে। তাই অবশ্যই প্রথমে হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে।
করণীয়ঃ
- হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
- বিশ্রাম নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন রকম অবহেলা করা যাবে না পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
- জীবনযাত্রার মাঝে নিয়ে আসতে হবে কিছুটা পরিবর্তন।
- প্রতিদিন যে সকল খাবার খান সেই খাবার তালিকার মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে।
- বাজারে কিছু মুখে খাওয়ার ঔষধ ও ইনজেকশন পাওয়া যায় সেগুলো প্রয়োগ করতে পারেন কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
- হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে টিকার গ্রহণ করা।
টিকা গ্রহণের সময়সূচীঃ
- প্রথম ডোজ যেকোনো দিন।
- দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ১ মাস পর।
- তৃতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ৬ মাস পর।
টিকা হচ্ছে হেপাটাইটিস বি ভালো হওয়ার সবথেকে কার্যকরী উপায়। তাই কোন শিশু যেন হেপাটাইটিস বি সংক্রমণে আক্রান্ত না হয় সেই কারণে সরকার কর্তৃক জন্মের পর শিশুকে হেপাটাইটিস বি এর টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
হেপাটাইটিস বি মারাত্মক একটি ব্যাধি। ভাইরাসজনিত এই ব্যাধি সম্পর্কে সকলের সচেতন থাকা জরুরী। হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। যেহেতু হেপাটাইটিস বি এর উপসর্গুলো সহজে বোঝা যায় না বা বোঝা গেল তা জানতে সময় লাগে ৩-৪ মাস পর তাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায় সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের লিভার বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ এম সাইদুল হক বলেন,
পার্থিব জীবনে আমাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসে কিংবা হাসপাতালে রোগীরা প্রায়ই জানতে চান হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায় কি? হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা হেপাটাইটিস বি মারাত্মক লিভার ধ্বংসকারী ভাইরাস যা সঠিক সময় চিকিৎসা না করালে লিভার সিরোসিস হয়ে তার জটিলতা জনিত পেটে পানি, রক্ত বমি, কালো পায়খানা, ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে অথবা লিভার ক্যান্সার তৈরি করে সরাসরি মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতে পারে।
পাশাপাশি এই ভাইরাস পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে পারে কিংবা কর্মস্থলের অন্যান্য সহকর্মীদের মাঝে সংক্রমণ হওয়ার সবচেয়ে ঝুঁকি বেশি থাকে। এই কারণে এই ধরনের রোগীরা ভালো কোন জায়গায় চাকরিপ্রার্থী হতে পারেন না কিংবা বিদেশ যেতে বিফল হন তাহলে বোঝা যায় হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও বলেন, এখন চিকিৎসা করবো কি কারণে, আমরা চিকিৎসা করবো রোগীকে এ ধরনের জটিলতা এবং রোগী যাতে ভাইরাসটি অন্যদের দেহে সংক্রমণ না ঘটাতে পারে।
কিংবা রোগীর যাতে ক্যান্সারের আবির্ভাব না ঘটে এজন্য চিকিৎসা করাবো। তাহলে চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য কি? চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো দেহ থেকে সক্রিয় হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া কিংবা দেহ থেকে বের করে দেওয়া। সেটি আমরা করে থাকি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ডি এন এ কে নেগেটিভ করার মাধ্যম দিয়ে।
আমরা চিকিৎসা দেওয়ার পূর্বে জেনে নেই, রোগীর রক্তে এইচ বিবি ডিএন পিসিআর পরীক্ষা করে ভাইরাসের সংখ্যা কতটুকু রয়েছে, ভাইরাস জীবিত কি মৃত রয়েছে, ভাইরাস সক্রিয় কি নিষ্ক্রিয় রয়েছে এবং চিকিৎসা লাগবে কিনা যদি দেখা যায় ভাইরাস জীবিত রয়েছে, সক্রিয় রয়েছে, সংখ্যায় বেশি রয়েছে তাহলে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নেগেটিভ করা এবং কোনভাবেই এইচবিএসএজি নেগেটিভ করার কোন লক্ষ্য থাকে না।
আমরা এইচ বিবিডিএনপিসিআর যদি নেগেটিভ করতে পারি তাহলে আমরা ধরে নেই রোগী ভাইরাসের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকেন। তাহলে এইচবিএসএজি নেগেটিভ হয় কিনা? হ্যাঁ নেগেটিভ হয় তবে দুটি ক্ষেত্রে। একটি হলো যদি কারো নেগেটিভ একিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশন হয়ে থাকে অর্থাৎ অনধিক ছয় মাস ব্যাপী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রদাহজনিত সমস্যা হয়ে যে লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো প্রকাশ পায়।
অর্থাৎ শরীর দুর্বল লাগা, প্রচন্ড খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, শরীরে জ্বর জ্বর ভাব হওয়া, শরীর জ্বালাপোড়া করা, পেটের উপরি ভাগে ডান দিকে ব্যথা করা একই সাথে চোখের রং ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে একিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশন এর ক্ষেত্রে দেখা যায় ৯০-১০০% ক্ষেত্রে এইচবিএসএজি (HBSAg) নেগেটিভ হয়ে যায়। তবে একিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশন এর সংখ্যা অনেক কম।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয় টনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশন হয়ে থাকে। এটা টনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশনের ক্ষেত্রে আমরা চিকিৎসা করলে মাত্র ২-৭ শতাংশ ক্ষেত্রে এইচবিএসএজি নেগেটিভ হয়ে যায়। বাকি ৯৩ শতাংশ এইচবিএসএজি পজেটিভ থেকে যায়। তাহলে আমরা চিকিৎসা করি কেন চিকিৎসা করানোর উদ্দেশ্য হল দেহ থেকে এইচ বিবিডিএনপিসিআর নেগেটিভ করা কিংবা আনডিটেকটিক করা।
আমরা ওষুধের মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকি। কারো ক্ষেত্রে ইন্টারফেরোর ইঞ্জেকশন মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে থাকি আবার কারো ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। এক্ষেত্রে দেখা যায় অত্যন্ত সাফল্য ভাবে ছয় মাস কিংবা এক বছর এর মধ্যেই শরীর থেকে এইচ বিবিডিএনপিসিআর নেগেটিভ বা আনডিটেকটিক হয়ে যায়। আর যখন নেগেটিভ হয়ে যায় তখন আমরা ধরে নেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এই ভাইরাসের ক্ষতি থেকে রোগ মুক্তি থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকে।
হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়
আমরা জানি যে, হেপাটাইটিস বি একটি ছোঁয়াচে ব্যাধি। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হতে অন্য একজন ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। তাহলে এখন প্রশ্ন হল হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়? উত্তর হল; বিয়ে না করাই উত্তম। কেননা আপনি যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন আর এ অবস্থায় আপনি যদি বিয়ে করেন তাহলে আপনার স্ত্রীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেননা এই ভাইরাস ইনজেকশন এর সিরিজ, স্ত্রীর সাথে মেলামেশা এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের মাধ্যমে নবজাতক সন্তান সংক্রমণ হতে পারে। তাহলে বুঝতে পারছেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিয়ে না করায় উত্তম। আগে এই ভাইরাস চিকিৎসা করানোর মাধ্যমে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত দিবেন বিয়ে করার।
হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ
হ্যাঁ, হেপাটাইটিস বি সাধারণত একটি ছোঁয়াচে রোগ। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনের দেহেতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এই ভাইরাস মূলত একজন হতে অন্যজনে দুইভাবে সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-
- হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তি হতে রক্ত গ্রহণ করলে বা রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে।
- হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনে যুক্ত হলে। এছাড়াও যদি গর্ভবতী মহিলা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তার নবজাতক সন্তানের মধ্যেও এই ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তাই বলা যায়, হেপাটাইটিস বি একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে খুব সহজেই প্রবাহিত হতে পারে। তাই যেসব ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাদেরকে সতর্কতার সাথে চিকিৎসা করানো উচিত এবং উপরোক্ত যেসব কারণে এই ভাইরাস ছড়ায় তা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সেই সব কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হেপাটাইটিস বি রোগীর খাবার
যেহেতু হেপাটাইটিস বি লিভারজনিত সমস্যা তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে ভিটামিনযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। তাই এসব রোগীদের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা হেপাটাইটিস 'বি' এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং সঠিক খাবারের প্রতি নজর দেওয়ার সুপারিশ করে থাকে। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীকে যেসব খাবার গ্রহণ করতে হবে তাহল;
- ভিটামিন এ, সি, ফাইবার এবং পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখবেন। যেমন-টমেটো, দুধ, পালংশাক, ব্রকলি, মিষ্টি আলু, স্ট্রবেরি, লেবু, কমলা, কলা, খেজুর টক দই ইত্যাদি।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। যেমন- মাছ, মুরগির মাংস, টুনা, ডাল, শুকনো ফল, ডিম, দুধ ইত্যাদি। প্রোটিন জাতীয় খাবার হেপাটাইটিস বি রোগীদের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বিভিন্ন শস্যদানা এবং বীজ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন- ওটস, ডালিয়া, কুমড়ো বীজ, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।
- হেপাটাইটিস বি রোগীদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন।
- ফ্যাট যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলোর মধ্যে মসুর ডাল, বাদাম, মুরগি বা মাছের মসলা থেকে কম পরিমাণে তেল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- বেশি বেশি পানি ডাবের পান করতে হবে।
- কফি বা চা খেতে পারেন তবে দুধ ও চিনি ছাড়া।
- মাংস, ডিম, মাছ, দুধ, দই ইত্যাদি শক্ত এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা হেপাটাইটিস বি রোগীরা প্রাথমিকভাবে বেছে নিতে পারেন।
- কিছু খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। কিছু খাবার যেমন- লবণ, চিনি, আম, আচার, তেল ইত্যাদি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়াও, রোগীদের বিশেষ করে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি এবং বিশুদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন ও খাবার গ্রহণ করা উচিত।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আপনারা জেনে থাকবেন বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণ অনেক বেশি। যেহেতু এই ভাইরাস ছোঁয়াচে একটি রোগ এবং শিশু বয়স থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের হয়ে থাকে তাই এই ব্যাধি থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আর যদি পারেন হেপাটাইটিস বি টিকা গ্রহণ করবেন। আশা করছি, আজকে আমরা হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যা আপনারা পুরোপুরি আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url