আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
ডালিম এর উপকারিতাআপনারা আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকে আমরা আমলকির উপকার এবং ক্ষতিকর দিক নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমরা সবাই জানি, আমলকি অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই অবগত না। তাই বিস্তারিত জানতে আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়াও প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত, চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করবো। কারণ আমলকি খাওয়ার আগে প্রত্যেককেই এর নিয়ম সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমলকি
ভেজজ গুনাগুন সম্পূর্ণ একটি ফল হচ্ছে আমলকি। আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম হল Phyllanthus Emblica। আপনারা জেনে থাকবেন আমলকির ফল ও পাতা উভয়ে ওষুধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, কমলার চেয়ে ২০গুণ, কলার চেয়ে ৬০ গুণ এবং পেয়ারার চেয়েও ৩ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে। আমলকিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন আমলকি খেলে রুচি বৃদ্ধি পায় এবং স্ক্যাভি রোগ সহ লিভার ও জন্ডিস প্রতিরোধেও বিবেচিত এই ফলটি। আমলকি নিয়ে গবেষণায় ফলাফল হিসেবে দেখা গেছে এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। আমলকি খাওয়ার ফলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা করতে পারে। এছাড়াও গবেষণায় পাওয়া গেছে, আমলকি খেলে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দিয়ে থাকে। আরও অন্যান্য অনেক উপকারিতা আমলকিতে রয়েছে যা আমরা আজকের লেখার মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা পেতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দিনে কমপক্ষে অন্তত ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন' সি'-এর প্রয়োজন। শুধুমাত্র দিনে দুটি আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন 'সি' পাওয়া যাবে। আপনারা প্রতিদিন ২ টি করেই আমলকি খাবেন এর চেয়ে বেশি খাবেন না।
আরও পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
কেননা আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'সি' রয়েছে। আমলকিতে অনেক উপকারিতা থাকলেও অনেক ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাই অতিরিক্ত আমলকি খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা থাকতে পারে। এজন্য প্রতিদিন ১-২ টি আমলকি খাওয়া উচিত।
আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
বহুকল বছর ধরে আমলকি প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন এই ফল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ফল খাদ্য ও ওষুধ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমলকিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার ফলে রেডিকেল থেকে সেল অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে থাকে। আমলকি বিভিন্ন রোগের জন্য চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'সি'।
এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্যারোটিন, ভিটামিন 'বি' কমপ্লেক্সের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব উপকারিতার পাশাপাশি আমলকি অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে শরীরের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আমলকির খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। এখন চলুন জেনে নেই, আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কে।
আমলকির উপকারিতা গুলো হল;
- আমলকি টক ও তেত হওয়ায় মুখের স্বাদ ও খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে।
- আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
- আমলকি লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে ফলে দাঁত ও নখ খেয়ে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে এবং শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- বয়সের ছাপ ও বলিরেখা দূর করতে আমলকি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- হৃদরোগের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
- চোখের জন্য বেশ উপকারী একটি ফল আমলকি। উপকার পেতে মধুর সাথে আমলকির রস পান করলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করে এবং চোখের দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে তোলে।
- আমলকি বিচ্ছিন্ন কোষ কে উজ্জীবিত করে যার কারণে হরমোনটি ইনসুলিন কে বের হতে দেয় না এবং ডায়াবেটিসে রক্তের গ্লুকোজ কে কমিয়ে নিয়ে আসে এবং দেহকে সুস্থ রাখে।
- আমরা জানি, আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে যার ফলে পরিপাকতন্ত্র সচল রাখতে সহায়তা করে।
- আমলকি গ্রহণ হৃদয়ের পেশীকে শক্তিশালী করে তোলে এবং অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমতে দেয় না।
- আমলকি চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং ঘন ও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- আমলকিতে কিছু ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে যা মাসিক ঋতুচক্রের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক উপকারী।
- যাদের মাঝে ইনসমনিয়া রোগ বা অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে তারা আমলকি খেলে ভালো উপকার পাবেন।
আমলকির অপকারিতা হল;
- অতিরিক্ত পরিমাণ আমলকি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ হতে পারে।
- আমলকি খেলে আপনার অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য চেষ্টা করবেন নিয়মিত খাওয়ার।
- বেশি বেশি আমলকি খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের এ ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ফল গ্রহণে এলার্জি প্রভাবের ফলে অনেকের ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, মুখে ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত আমলকি খেলে মাথার ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে খুশকি, চুল পড়া সহ চুলকানি হতে পারে।
- সার্জারি হলে আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়াও ব্লাড
- থিনিংয়ের ওষুধ খেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আমলকি খাওয়া উচিত।
- স্তন্যদানকারী ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- আমলকিতে পটাশিয়াম থাকায় ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের এ ফল অতিরিক্ত খেলে সমস্যা হতে পারে।
- বেশি বেশি আমলকি খেলে সর্দি, জ্বর, কাশি হতে পারে।
চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা
আমরা আমলকির অনেক উপকার সম্পর্কে জেনেছি। তার মধ্যে একটি হল চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি। আমলকি চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকরী। আপনারা যারা চুলের যত্ন নিতে পছন্দ করেন তারা চেষ্টা করবেন প্রতিদিন আমলকি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে। এখন চলুন, আমলকি ব্যবহার করে চুলের কি কি উপকার হয় এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা সম্পর্কে জেনে নেই।
আরও পড়ুনঃ চুল পড়ার কারণ সম্পর্কে জানুন
- চুলের যত্নে আমলকির প্যাক তৈরি করুন। চুলকে মসৃণ করতে আমলকিকে গুড়ো করে সাথে ডিম, মেহেদী একসাথে মিশ্রণ করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
- চুলের রুক্ষ শুষ্ক দূর করতে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে আমলকি চূর্ণ ব্যবহার করুন। এতে চুলের রুক্ষ শুষ্ক ভাব দূর হবে।
- আমলকিতে থাকা উৎপন্ন কোলাজেন চুলের ফলিকলের মৃত কোষকে নতুন করে সৃষ্টি করে।
- আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টি - ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে, ত্বকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের খুশকি দূর করে।
- আমলকি রস মাথায় ব্যবহার করলে চুলের পাকা ভাব দূর হয় এবং চুল পড়া কমে যায়।
- আমলকি রস চুলকে মজবুত করতে এবং দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- আমলকিতে ভিটামিন 'সি' ও অ্যান্টি অক্সাইড বিদ্যমান যার ফলে অল্প বয়সে চুল পাকা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- চুলকে সুন্দর দেখতে চান? তাহলে প্রথমে আমলকি সিদ্ধ করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর নারকেলর সাথে শুকনো আমলকি ১৫-২০ মিনিট গরম করুন। তারপর রেখে দিন ঠান্ডা হয়ে গেলে তা পরিষ্কার পাত্রে রেখে দিন। উপকার পেতে সবচেয়ে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
আমলকির ক্ষতিকর দিক
আমলকি ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন একটি উপকারী ফল হিসেবে ব্যাপক পরিচিত হলেও এর ক্ষতিকর দিক অনেক রয়েছে। তাই এই ফল গ্রহণে সর্তকতা থাকাও আমাদের জন্য জরুরী। অতিরিক্ত আমলকি খেলে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। যারা আমলকি খেতে খুব পছন্দ করে তাদের অবশ্যই এ বিষয়ে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই, আমলকির ক্ষতিকরক দিকগুলো কি কি।
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- এলার্জি
- ঠান্ডা লাগা
- লিভারের সমস্যা
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
- উচ্চ রক্তচাপ
- প্রসাবে জ্বালাপোড়া
- চুলের সমস্যা
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ আমলকি প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রতিদিন ১-২ টি আমরা কি খাবেন কিন্তু এর বেশি না।
এলার্জিঃ যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি না খাওয়াই ভালো। এতে এলার্জির সমস্যা আরও দেখা দিতে পারে।
ঠান্ডা লাগাঃ আমলকি খেলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণ আমলকি খেলে জ্বর সর্দি হতে পারে। তাই যাদের জ্বর সর্দি রয়েছে তারা এ ফল না খাওয়াই উত্তম।
লিভারের সমস্যাঃ অনেকেই আছে আমলকির সাথে আদা একসাথে খেয়ে থাকেন। যার কারণে লিভারের উপর প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত আমলকি খেলে লিভারে সিরাম গ্লুটামিক পাইরুভিক টান্সমিনেজ মাত্রা বাড়ায়। যার ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ প্রকৃতিগতভাবে আমলকি অ্যাসিডিটি বিদ্যমান। বেশি বেশি খেলে গ্যাস্টিক সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ প্রভাবিত করেঃ আপনাদের যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি না খাওয়াই ভালো। এই সময় আমলকি খেলে আপনার দেহের সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে যার ফলে কিডনি সঠিক মত কাজ করতে পারে না। এতে শরীরে পানি জমতে শুরু করে এবং উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
প্রসাবে জ্বালাপোড়াঃ আমলকিতে অতিরিক্ত ভিটামিন 'সি' থাকায় যদি আপনি বেশি বেশি খান তাহলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং প্রসাবের অনেক গন্ধ হতে পারে।
চুলের সমস্যাঃ যাদের ত্বক বা মাথার ত্বক শুষ্ক তারা যদি অতিরিক্ত আমলকি খায় তাহলে মাথায় খুশকি, চুল পড়া, ত্বকে চুলকানি সহ অন্যান্য সমস্যা ও দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আপনারা জানেন আমলকি আয়ুর্বেদিক ঔষধি হিসেবে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছি। যা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। প্রতিদিন আমলকি খেলে আমাদের দেহের অনেক উপকার হয়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আমলকির খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকার ও ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা পুরোপুরি লেখাটি পড়লে উপকারে আসবে।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url