শীতকালে সবজির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিনআপনারা শীতকালে সবজির উপকারিতা গুলো কি জানতে চাচ্ছেন? তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমরা শীতকালীন সবজি চাষের সময়, শীতকালে সবজি উপকারিতা এবং শীতকালীন সবজির নামের তালিকা ও বিদেশে শীতকালে কোন সবজি পাওয়া যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত শীতকালে সবজির উপকারিতা আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে সবজির উপকারিতা অপরিসীম। নিয়মিত সবজি খেলে শরীরের বিভিন্ন ব্যাধি রোধে ও নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে। যা আমাদের প্রত্যককেই জানা উচিত। তাই বিস্তারিত জানতে পড়ে ফেলুন শীতকালে সবজির উপকারিতা আর্টিকেলটি।
শীতকালীন সবজি বলা হয় কেন
আমাদের দেশে ঋতু ভেদে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। এক এক ঋতুতে এক এক ধরনের সবজির ফলন হয়ে থাকে। তেমনি শীতকালে বিভিন্ন রকম শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আপনারা জানতে চাচ্ছেন যে শীতকালীন সবজি বলা হয় কেন? যেসব সবজি শীতকালে চাষ করা হয় সেসব সবজিকে শীতকালীন সবজি বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরা ও মধু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
যেমন-ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো, আলু, মুলা শিম, লাউ, পালং শাক, লাল শাক ইত্যাদি। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এসব শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিহার্য। তাই আপনারা চেষ্টা করবেন নিয়মিত শাক-সবজি খাওয়ার।
শীতকালীন সবজি চাষের সময়
শীতকালীন সবজি চাষ করার কিছু নিয়ম আছে। যদি আপনারা সঠিক সময় নির্ধারণ করে সবজি চাষ করতে পারেন তাহলে বেশি লাভবান হতে পারবেন। শীতকালীন সবজি চাষ মূলত শীত আসার আগেই শুরু হয়। এতে ফসল খুব তাড়াতাড়ি উঠে ফলে সবজির দাম বেশি পাওয়া যায় এবং কৃষকেরাও লাভবান হয়। শীতকালীন সবজি চাষের সময় হল সেপ্টেম্বর - অক্টোবর যা বাংলা মাস আশ্বিন - কার্তিক এর দিকে। আপনারা জানেন যে কোন ফসলই যদি আগাম চাষ করা হয় তাহলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ ডালিম এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
কারণ বাজারে নতুন শাকসবজির চাহিদা ব্যাপক থাকে। আর এই সময় যদি আপনি ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারেন তাহলে বেশি দামে আপনার উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারবেন। তবে যারা শীতকালীন সবজি চাষ করতে চায় তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে কোন সবজি চাষ করলে তা কতদিনের মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব হবে। সে অনুযায়ী চাষ শুরু করতে হবে।যেমন ধরুন ফুলকপি এবং বাঁধাকপি চাষ করলে ২০ - ২৫ দিন এর মধ্যে তা বাজারজাত করতে পারবেন।
যদি কার্তিক মাসের শুরুর দিকে চারা রোপণ করেন তাহলে কার্তিক মাসের শেষের দিকে বা অগ্রাহায়ণ মাসের প্রথম দিকে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি বিক্রি করতে পারবেন। এই সময়টায় বাজারে এই সবজিগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। তাই ফুলকপি এবং বাঁধাকপির মত যেসব শীতকালীন সবজির তালিকায় রয়েছে সেগুলো সবজি যদি ২০ - ২৫ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যায় সেগুলো সবজির কার্তিক মাসের শুরুর দিকে রোপণ করতে হবে।
এছাড়াও শীতকালীন সবজি যেমন- টমেটো, শিম, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, মরিচ, শসা, কচু, লাল শাক, পালং শাক ইত্যাদি সবজি আগস্ট থেকে অক্টোবর এই মাসের শুরুর দিকে চারা রোপন করতে হবে। তাহলে শীতের শুরুতে বা শীতের মাঝামাঝিতে এ সকল সবজিগুলো বাজারজাত করতে পারবেন।
শীতকালে সবজির উপকারিতা
সারা বছরই প্রায় আমাদের দেশে কমবেশি সব ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে শীতকালই শাকসবজি উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। অন্যান্য সময়ের সবজির তুলনায় শীতকালে উৎপাদিত সবজির স্বাদ বেশি লাগে। এবং বেশিরভাগ সবজি শীতকালে পাওয়া যায় যার কারণে শীতকালে এই সময়টায় শাকসবজির চাহিদা ব্যাপক থাকে। শীতকালে সবজির উপকারিতা বলতে গেলে শেষ করা যাবে না।
আরও পড়ুনঃ সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার ফলে ক্যান্সার, কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র ও হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাই নিয়মিত শাকসবজি খেলে শরীরের বিভিন্ন ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাবেন। শাকসবজিতে প্রচুর আঁশ থাকে যা খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ার সহায়তা করে।
এছাড়াও শিশুদের অপুষ্টি জনিত রাতকানা, বিভিন্ন চর্মরোগ, মুখের ঘা রক্তশূন্যতা দূর করতে অগ্রই ভূমিকা পালন করে। তাহলে চলুন শীতকালে সবজির উপকারিতা আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নেই।
শীতকালে সবজির উপকারিতা;
- ভিটামিন ও মিনারেলের অন্যতম উৎস হল শাকসবজি। মূলত ভিটামিন ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের শরীরকে খাদ্যের শর্করা, আমিষ ও চর্বির ব্যবহারে সাহায্য করে।
- শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের ত্বকের বার্ধক্য রোধে ভূমিকা রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে।
- শাকসবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং আমাদেরকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে।
- শাকসবজির আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালীর ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকারী ভূমিকা রাখে।
- শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে যা আমাদের দেহের পানির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
- শাক-সবজিতে রয়েছে প্রথম প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। যা আমাদের দেহকে সুস্থ সবল সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, চুল পড়া রোধে সহায়তা করে।
- ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা কিডনির পাথর হওয়ার রোধে ও ক্যান্সার নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
- বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি ও প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যার শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে ওজন কমাতে বাঁধাকপি যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বাঁধাকপি আলসার দূর করতে সহায়তা করে।
- পালং শাক এ রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, ফলিক এসিড যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। পালং শাক আমাদের শরীরের আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- শিমের আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এবং পাকস্থলী ও প্লীহার শক্তি বাড়ায়।
- টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি যা দেহের হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও ভিটামিন সি এর অভাব জনিত রোগ স্কার্ভি ও চর্মরোগ প্রতিরোধে টমেটো অনেক কার্যকরী। টমেটোতে লাইকোপেন নামের এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- আমরা সবাই জানি, টমেটো ও গাজর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। গাজরে রয়েছে বিটা- ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, কে, বি৬, পটাশিয়াম, ফাইবার, থায়ামিন এবং ম্যাঙ্গানিজ। তাই নিয়মিত গাজর খেলে চোখ ও দাঁতের সুরক্ষা বজায় থাকে, লিভার সুস্থ থাকে ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও ওজন কমাতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত গাজর খান।
উপরিউক্ত সবজি ছাড়াও আরো বিভিন্ন শীতকালীন সবজি রয়েছে যা আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই চেষ্টা করবেন নিয়মিত সবজি খাওয়ার। এতে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে এবং শরীর সুস্থ সবল থাকবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, বিটা - ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট। দেহের অস্থিক্ষয় রোধে এবং রক্তকণিকা গঠনে শীতকালীন সবজির উপকারিতা অপরিসীম। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক, শীতকালীন সবজির নামের তালিকা সম্পর্কে। শীতকালীন সবজি গুলো হল;
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- লাল শাক
- পালং শাক
- মুলা
- আলু
- টমেটো
- শিম
- লাউ
- পেঁয়াজ পাতা
- মটরশুঁটি
- শসা
- গাজর
- ব্রকলি
- বরবটি
- ঝিঙ্গা
- কাকরোল
- পটল
- ধনিয়া পাতা
- ওল
- মিষ্টি কুমড়া
- মটরশুঁটি
- শালগম ইত্যাদি
আমেরিকার শীতকালে কোন সবজি পাওয়া যায়
আমেরিকায় মোটামুটি সব ধরনেরই সবজি পাওয়া যায়। বলতে গেলে বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সকল ধরনের শাক সবজি আমেরিকায় পাবেন। প্রবাসীদের কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা এসব কাঁচামাল আমদানি করে থাকেন। কারণ প্রতিটা প্রবাসীরাই নিজের দেশের উৎপন্ন শাকসবজি খেতে পছন্দ করেন। এখন চলুন জেনে নেই, শীতকালে সবজির উপকারিতা আর্টিকেলের এই পর্বে আমেরিকার শীতকালে কোন সবজি পাওয়া যায়। আমেরিকায় শীতকালে যেসকল সবজি পাওয়া যায় তার কিছু নাম তুলে ধরা হলো;
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- বেগুন
- লাল শাক
- পালং শাক
- কাঁচামরিচ
- মুলা
- আলু
- টমেটো
- শিম
- লাউ
- মটরশুঁটি
- শসা
- গাজর
- পটল
- ব্রকলি
- ক্যাপসিকাম
- ধনেপাতা
- মিষ্টি কুমড়া
- ঢেড়স
- করলা ইত্যাদি।
টবে শীতকালীন সবজি চাষ
শীতকালীন যেসব সবজি রয়েছে সেসকল সবজি জমিতে চাষ করা হয় পাশাপাশি আপনি চাইলে টবে করে বাসার ছাদে চাষ করতে পারবেন। অনেকেই আছেন যেকোন গাছ, ফলমূলের বা সবজির গাছ টবে করে চাষ করতে পছন্দ করেন। এতে শখের পাশাপাশি পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হয়। টবে চাষ করার গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল যে আপনি স্বল্প সময়ে স্বল্প পরিশ্রমে রাসায়নিক মুক্ত টাটকা শীতকালীন সবজি খেতে পারছেন। টবে শীতকালীন সবজি চাষ করার জন্য কিছু নিয়ম - কানুন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
তাহলে আপনি খুব সহজেই শীতকালীন সবজি উৎপাদন করতে পারবেন। টবে শীতকালীন সবজি চাষ করার জন্য আপনাকে সেপ্টেম্বর - অক্টোবর মাসের মধ্যে চারা রোপণের কাজ শুরু করতে হবে। টবে সবজি চাষ করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাটিগুলো ভালো হয় এবং পানি ধরার ক্ষমতা থাকে। প্রথমে মাটিগুলো ভালোভাবে ঝরঝরে করে নিতে হবে এরপর মাটির সাথে পরিমাণ মতো জৈব সার মিশিয়ে নিয়ে চারা রোপন করার জন্য উপযুক্ত করে নিতে হবে।
যদি মাটি গুলোর সাথে পরিমাণ মতো গোবর মিশানো যায় তাহলে সবজি চাষের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়। এভাবে কোন পাত্রে বা ব্যাগে ৮-১০ দিন রেখে দিয়ে তারপর চারা রোপণ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। যেসব শীতকালীন সবজি টবে চাষ করা হয় তা হল; টমেটো, মরিচ, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, শসা, শিম, ব্রকলি, ধনেপাতা ইত্যাদি।
বারোমাসি সবজি তালিকা
যেসব সবজি বারোমাস বা সারা বছর পাওয়া যায় সেসব সবজিকে বারোমাসি সবজি বলে। অনেকে জানতে চান বারোমাসি সবজি কোনগুলো। আজকে আমরা শীতকালে সবজির উপকারিতা আর্টিকেল এর মাধ্যমে জেনে নেব বারোমাসি সবজির তালিকায় সম্পর্কে। বারোমাসি সবজি গুলো হল;
- লাউ
- কচু
- আলু
- বেগুন
- মরিচ
- আদা
- কলা
- টমেটো
- ক্যাপসিকাম
- পেঁপে
- করলা
- মিষ্টি কুমড়া
- চাল কুমড়া
- ঢেঁড়স
- পুইশাক
- লালশাক ইত্যাদি।
শেষ কথা - শীতকালে সবজির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, শাক - সবজি খেলে শরীরের উপকার হয় তা সম্পর্কে সবাই জানি। কিন্তু সবজি খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত শীতকালে সবজির উপকারিতা আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে এবং ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি রাখুন শরীরকে সুস্থ রাখুন।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url