কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম - ২০২৪

 স্থায়ী মোটা হওয়ার ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনআপনারা কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি কৃমি কেন হয়, কৃমি হওয়ার লক্ষণ কি, কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়, অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে আজকের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম - ২০২৪ আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম - ২০২৪
কৃমি খুবই ক্ষুদ্র হয় কিন্তু অতিরিক্ত কৃমি হলে এর প্রকোপ মারাত্মক হতে পারে। আমাদের দেহের রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কৃমি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা উচিত।

কৃমি কেন হয়

কৃমি আকারে খুবই ছোট হয় প্রায় অদৃশ্য। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই ধরনের কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে দিনে ০.২ মিলি লিটার রক্ত শোষণ করে। শরীরে অনেক কৃমি থাকলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে রক্ত ক্ষয় হয়। ফলে শিশুরা অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভোগে। বড়দেরও কম কষ্ট হয় না। এ ছাড়া কৃমির কারণে অ্যালার্জি, ত্বকে চুলকানি, শুষ্ক কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক সময় কৃমি অন্ত্রের বা গলব্লাডারের নালীতে আটকে যায় এবং বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করে। তাই কৃমির সংক্রমণ একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।
কৃমি কেন হয়? কৃমি হয় দূষিত মাটি ও পানির কৃমিতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া বাজারের না ধুয়ে শাকসবজি, মাছ, মাংস খেলে বা আধা রান্না করা খাবার খেলে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। কৃমির ডিম বা লার্ভা সাধারণত মাটি বা পানি থেকে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের হাত বা পায়ে লেগে থাকে। কখনও কখনও এই লার্ভাগুলি হাত থেকে মুখের মাধ্যমে অন্ত্রে যায়। নোংরা পরিবেশ, অনিরাপদ পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, খালি পায়ে হাঁটা কৃমির উপদ্রবের জন্য দায়ী।

কৃমি হওয়ার লক্ষণ কি

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃমির সংক্রমনের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা যায়:
  • ওজন কমে যাওয়া।
  • হালকা পেটে ব্যথা করে।
  • বমি বমি ভাব।
  • বিরক্ত লাগা।
  • বমি বা কাশি হওয়া।
  • মলদ্বারে চুলকানি।
  • চুলকানির কারণে ঘুম নষ্ট হওয়া।
  • মলের সাথে রক্ত যাওয়া।
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়া।
  • প্রস্রাব বেশী হওয়া এবং মেয়েদের প্রস্রাবের সময় ব্যথা।
  • অন্ত্রের ক্ষত থেকে রক্তপাত এবং রক্তশূন্যতা।
  • ক্ষুধা হ্রাস পায়।
  • বদহজমের কারণে ডায়রিয়া হওয়া।
  • পিকা বা ভোজ্য নয় এমন জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা (যেমন মাটি)।

কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো

অ্যালবেন্ডাজল ৪০০ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট হল একটি অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধ যা পরজীবী কৃমি দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত নিউরোসিস্টিসারকোসিস (মস্তিষ্ক, পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুকে প্রভাবিত করে), গিয়ার্ডিয়াসিস অন্ত্রের সংক্রমণের মতো রোগের জন্য নেওয়া হয়। জলের রোগ, পিঁপড়ার রোগ অন্ত্রের সংক্রমণ, অ্যাসকেরিয়াসিস গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ, ফাইলেরিয়াসিস লিম্ফ নোড এবং জাহাজগুলিকে প্রভাবিত করে। 
এই ওষুধটি অ্যান্থেলমিন্টিক্স নামে পরিচিত ড্রাগ গ্রুপের অধীনে পড়ে। যা পরজীবী কৃমিকে নির্যাতন করে বা হোস্ট শরীরের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না করেই তাদের মেরে ফেলে। এটি ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এবং মৌখিকভাবে নেওয়া যেতে পারে। হল একটি অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধ। যা পরজীবী কৃমি দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত নিউরোসিস্টিসারকোসিস মস্তিষ্ক, পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুকে প্রভাবিত করে।

গিয়ার্ডিয়াসিস অন্ত্রের সংক্রমণের মতো রোগের জন্য নেওয়া হয়। এই ওষুধটি অ্যান্থেলমিন্টিক্স নামে পরিচিত ড্রাগ গ্রুপের অধীনে পড়ে, যা পরজীবী কৃমিকে নির্যাতন করে বা হোস্ট শরীরের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না করেই তাদের মেরে ফেলে। এটি ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এবং মৌখিকভাবে নেওয়া যেতে পারে।

কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

কৃমিনাশক ওষুধের ডোজ দুই বছর থেকে সবার জন্য একই, অর্থাৎ আপনি যে পরিমাণ ওষুধ খান, আপনার আড়াই বছরের শিশুরাও একই পরিমাণ ওষুধ খাবে। তাই এ নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। বাড়ির সবাই মিলে কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে। এতে সহজেই কৃমির হাত থেকে সবাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সুস্থ মানুষ বা শিশুরা চার -পাঁচ মাস অন্তর কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করলে কোনো ক্ষতি নেই। আজকাল দুই বছরের কম বয়সী শিশুদেরও কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। 
তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশু রাউন্ডওয়ার্ম ছাড়া অন্য কৃমিতে আক্রান্ত হলে মেবেন্ডাজল ১০০ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট প্রতি ১২ ঘণ্টা অন্তর ৩ দিন। বা অ্যালবেন্ডাজল ৪০০ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট বা পাইপেরাজিন ৪ গ্রাম একটি ট্যাবলেট দিতে হবে। থ্রেডওয়ার্ম হলে মেবেনডাজল ১০০ মিলিগ্রাম বা অ্যালবেন্ডাজল ৪০ মিলিগ্রাম বা পাইপেরাজিন ৪ গ্রাম একটি ট্যাবলেট দিতে হবে। দুই সপ্তাহ পর আরও একটি বড়ি খেতে হবে। 

ক্রিমি ওষুধের জন্য শীত বা গ্রীষ্ম কোন ব্যাপার না। এটি যে কোনও সময় খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না। জেনে রাখা ভালো যে বিভিন্ন ধরনের কৃমি শিশুদের শরীরে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। শিশুদের কৃমির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা হ্রাস, আয়রনের ঘাটতি এবং রক্তশূন্যতার কারণে দুর্বলতা, বৃদ্ধি রোধ, অপুষ্টি, পেট ফাঁপা এবং ডায়রিয়া। কৃমির কারণে অ্যালার্জি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, কাশি হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য লেখক ও গবেষক; ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়াট্রিক মেডিসিন (আইজিএম), বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, ঢাকা।

অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়

কৃমি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু নানা ভ্রান্ত ধারণার ভয়ে অনেকেই কৃমির ওষুধ খায় না। বাচ্চাদেরও খাওয়াতে চায় না। কিন্তু নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করলে এবং কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃমি সহজেই দূর করা যায়। অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কি চলুন জেনে নেই।
  • গ্রীষ্মকালে কৃমিনাশক করা উচিত নয় এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা যে কোন সময় কৃমিনাশক সেবন করা যায়। তবে খাওয়ার পর বা ভরা পেটে খাওয়া ভালো।
  • পরিবারের একজন সদস্য প্রতি তিন মাসে একটি অ্যালবেন্ডাজল বড়ি খেতে পারেন। মেবেনডাজল পরপর তিন দিন খেতে হবে। সাত দিন পর আরেকটি ডোজ নেওয়া যেতে পারে। শিশুদেরকেও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে খাওয়ানোর আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • অ্যান্থেলমিন্টিক্স নিরাপদ ওষুধ। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যাইহোক, কেউ কেউ পেট ফাঁপা বা বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারে। অনেক সময় কৃমিনাশক সেবনের পর শিশুরা অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায় বেশিরভাগই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে।
  • পানি সিদ্ধ বা বিশুদ্ধ করা আবশ্যক। শাকসবজি ও মাংস খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে বাচ্চাদের কীভাবে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধুতে হয় তা শেখানো গুরুত্বপূর্ণ।
  • খোলা অপরিষ্কার খাবার না খাওয়াই ভালো। বাচ্চাদের খেলার মাঠে খালি পায়ে খেলতে দেবেন না।
  • গ্রামে বা রাস্তায় শুধু বাচ্চাদের কৃমি হয় এমন ধারণাও ভুল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃমির সংক্রমণ যে কেউ হতে পারে। তাই অপুষ্টি এড়াতে নিয়মিত কৃমিনাশক সেবন করা ভালো।

কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকেরই কৃমির সমস্যা থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধও পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ওষুধের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বাড়িতে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক সহজ। চলুন জেনে নেই, কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি।

রসুনঃ রসুন একটি পরজীবী বিরোধী খাবার যা কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা রসুনের অ্যামাইনো অ্যাসিড পেটের কৃমি মেরে ফেলে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খান। এক সপ্তাহ নিয়মিত খান। দুই কোয়া রসুন আধা কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক সপ্তাহ নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।

নিম পাতাঃ নিম পাতাও কৃমি দূর করে। এর জন্য, সকালে খালি পেটে আধা চা চামচ নিম পাতার পেস্টের সাথে হালকা গরম পানি পান করুন। নিয়মিত সেবনে কৃমির সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি মিলবে।

লবঙ্গঃ প্রতিদিন ১-২টি লবঙ্গ খান। লবঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা কৃমি ধ্বংস করতে সহায়তা করে।

গাজরঃ একটি গাজর কুঁচি কুঁচি করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। কেননা গাজরে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি এবং জিঙ্ক যা কৃমি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

হলুদঃ ১ চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। এছাড়া আধা কাপ গরম পানিতে সামান্য হলুদ গুঁড়ো ও লবণ মিশিয়ে পান করুন। নিয়মিত পাঁচ দিন খেলে উপকার পাবেন।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ খাওয়ার আগে আপেল সিডার ভিনেগার পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। যা শরীরে পরজীবী ও জীবাণুর লার্ভা মারতে সাহায্য করে।

আনারসঃ আনারসে রয়েছে ব্রোমেলেন নামক এনজাইম। যা পরজীবী নিধনে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, তিন থেকে চার দিন শুধু আনারস খেলে কৃমি পুরোপুরি সেরে যায়।

কুমড়ার বীজঃ কৃমি থেকে মুক্তি পেতে কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। এর উপাদান কৃমি ও পরজীবী ধ্বংস করে। এর জন্য সমপরিমাণ নারিকেলের দুধ ও পানি মিশিয়ে নিন। তারপর এক চা চামচ ভাজা এবং গুঁড়ো কুমড়ার বীজ মিশিয়ে পান করুন। সকালে খালি পেটে এই পানীয়টি পান করুন। এক সপ্তাহ এই পানীয় পান করলে অন্ত্রের সমস্ত কৃমি দূর হবে।

শেষ কথা - কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

শিশু থেকে শুরু করে প্রত্যেকেরই কৃমি হয়ে থাকে। কৃমি হয় সাধারণত আমাদের অসচেতনতার কারণে। তাই কৃমি থেকে মুক্তি পেতে ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলতে পারে। যা আমরা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। আশা করছি, আপনারা সম্পূর্ণ লেখা পড়ে কৃমি বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যেসব কারণে কৃমি হয় তা থেকে সতর্ক থাকার চেষ্টা করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url