কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতাআপনারা অত্যন্ত পুষ্টিকর কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই উপকারী ফল কলার পুষ্টিগুণ, কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চচা, কলা খাওয়ার উপকারিতা ও কলার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে মনোযোগসহ কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন আর্টিকেলটি পড়ুন।
কলা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য কলার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি কলা খেলে কি ক্ষতি হয় তা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই বিস্তারিত কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন আর্টিকালটি পড়ার মাধ্যমে।
কলা কোথায় বিখ্যাত
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি ফল হচ্ছে কলা। কলার বৈজ্ঞানিক নাম হল মুসা। কলা সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু দেশগুলোতে ভালো জন্মায়। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই কলা অন্যতম প্রধান ফল। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফল ফসলের মধ্যে গম, ধান ও ভুট্টার পরেই কলার স্থান। কলা বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ইত্যাদি এলাকায় দীর্ঘ বছর যাবত ব্যাপকভাবে কলা চাষ হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে কলা চাষের অন্যতম সুবিধা হল সারা বছর এই দেশের প্রায় সব অঞ্চলের জমিতে চাষ করা যায়। এখন চলুন জেনে নেই, বর্তমানে কলা কোথায় বিখ্যাত। কলার জন্য বিখ্যাত জেলা হল- নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ ও বগুড়া। তবে বাংলাদেশের মধ্যে সুস্বাদু কলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদী জেলা।
কলার পুষ্টিগুণ
আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কলা। কলা দামে কম হলেও এর পুষ্টিগুণ অপরিসীম। এ ফলটির জনপ্রিয়তা রয়েছে পুরো বিশ্বব্যাপী। কলার পুষ্টিগণ সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ করা যাবে না। কলাতে যেসব পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় তা হল;
- ভিটামিন বি ৬।
- ফাইবার।
- পটাশিয়াম।
- ম্যাগনেসিয়াম।
- ভিটামিন সি।
- ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি।
এবং একটি মাঝারি পাকা কলাতে রয়েছে-
- প্রায় ১১০ ক্যালোরি।
- চর্বি ০ গ্রাম।
- প্রোটিন ১ গ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট ২৮ গ্রাম।
- চিনি ১৫ গ্রাম।
- ফাইবার ৩ গ্রাম।
- পটাশিয়াম ৪৫০ মিলিগ্রাম।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা কলা খেতে সবাই পছন্দ করি। কলা খাওয়াও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কলাতে রয়েছে শরীরের জন্য পুষ্টিকর কিছু উপাদান। যা পেশী গঠনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দারুণ কাজ করে। এছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ হৃদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। সারাদিনের কাজের এনার্জি যোগায় এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে কলা সকালে কখন খাওয়া ভালো।
আরও পড়ুনঃ ডালিম এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
পুষ্টিবিদদের মতে, সকালে কলা খেতে পারেন তবে অবশ্যই খালি পেটে নয়। সকালে খালি পেটে কলা খেলে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বিপাক ক্রিয়ার উপর প্রভাব পড়ে এবং অ্যাসিড হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অন্য কিছু খাবার যেমন-ওটস পাউরুটি বা অন্য খাবার খাওয়ার পর কলা খেলে কোন সমস্যা নেই।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি । আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কলার গুরুত্ব অপরিসীম। কলাতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ফাইবার, পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি ইত্যাদির মত প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিকর উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। একটি মাঝারি সাইজের কলা থেকে আমাদের শরীরে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে থাকে। যা হৃদরোগ ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এখন চলেন জেনে নেই, কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি। তা হল;
আরও পড়ুনঃ সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- কলা খেলে ত্বকের উন্নতি বৃদ্ধি পায়। ত্বকের ক্ষতসহ বলি রেখা দূর করতে সাহায্য করে।
- কলাতে রয়েছে ইলেকট্রোলাইট যা দেহকে আদ্রতা রাখতে বজায় রাখে।
- কলাতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা হাড় শক্ত রাখে। এছাড়াও হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- কলাতে অন্যান্য ফলের তুলনায় চিনি ও ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। এ ফলটিতে পর্যাপ্ত আঁশ ও আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- কলাতে রয়েছে পেকটিন নামক একটি ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীরে এনার্জি বাড়াতে কলার জুড়ি নেই। শরীরের ওজন কমে গেলে বা শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে চিকিৎসকেরা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- এছাড়াও যৌন সমস্যায় কলা ভূমিকা রাখে।
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
পাকা কলা হোক আর কাঁচা কলা হোক আমাদের স্বাস্থ্যর জন্য পুষ্টিগুণ যোগায় এবং শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমরা সবাই কলা খেয়ে কলার খোসা ফেলে দেই। আপনি জানেন কি কলার খোসাও আমাদের বিভিন্ন কাজে লাগে। কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা যায়। তাই কলা খেয়ে কলার খোসা যেখানে সেখানে ফেলে দিবেন না।
আরও পড়ুনঃ মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
কলা খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে নিজের রূপচর্চায় কাজে লাগান আর না হলে আপনার বাসার গৃহপালিত প্রাণীকে খাওয়ান। অনেকে জেনে থাকবেন প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা করা আমাদের ত্বকের জন্য নিরাপদ। এখন চলুন কিভাবে কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায় তা সম্পর্কে জেনে নেই।
- কলা খেয়ে তারপর ফেলে দেওয়া কলার খোসা অর্ধেক বা ৩ টুকরো করে তা দিয়ে মুখে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করতে হবে। তারপর ১০-১৫ রেখে দিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ধীরে ধীরে ত্বকের ক্ষতসহ বলে বলিরেখা দূর হয়ে যাবে।
- কলার খোসা দিয়ে ফেসপ্যাক বানালে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কলার খোসায় সামান্য কলা রেখে দিয়ে তার সাথে মধু ও এক চামচ দই মিশে ভালো করে মিক্সড করতে হবে। এই মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে ১০-১৫ লাগিয়ে রাখুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
- ঠোঁটের যত্নেও কলার খোসা। কলাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় কলার খোসা দিয়ে ঠোটে ঘষে দিলে ঠোঁটের আদ্রতা বৃদ্ধি পায়।
- দাঁতের হলুদ ভাব দূর করতেও কলার খোসা কাজে লাগে। কলারখোসার ভেতরের যে আঁশ তা দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁতে ঘষুন। এরপর আপনার ব্যবহৃত টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করুন। এতে দাঁতের হলুদ ভাব দূর হবে এবং দাঁত হবে ঝকঝকে।
- পোঁকামাকড় কামড়ানোর ফলে ত্বক চুলকায়। চুলকানি দূর করতে কলার খোসা চুলকানি স্থানে মালিশ করুন দেখবেন চুলকানি সেরে যাবে।
- মুখের ব্রণ দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করুন। ব্রণ দূর করতে খোলার খোসা দিয়ে সেই স্থানে মালিশ করে সারা রাত রেখে দিন। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- ত্বকের শুষ্কতা ও খসখসে ভাব দূর করতে কলার খোসার ভেতরের অংশ কিছুক্ষণ মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে ত্বক হবে মসৃণ ও নরম।
কলার ক্ষতিকর দিক
আমরা শুধু কলার উপকার সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী এই ফল খেলে যে ক্ষতি হয় তা সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। খেতে যেমন ভালো পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ফলটি বেশি খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়ে থাকে। শরীরের উপকার হয় এমন কথা ভেবে যদি বেশি বেশি কলা খেয়ে ফেলেন তাহলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই কলা খাওয়ার উপকারিতা ও কলার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে প্রত্যেকেরই জানা উচিত। এতে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। তাই বেশি বেশি কলা খাওয়ার আগে জেনে নিন কলার ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি।
- একটি মাঝারি কলাতে প্রায় ১১০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। তাই বেশি বেশি কলা খেলে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। ওজন ধরে রাখতে প্রতিদিন ১-২ কলা খেতে পারেন।
- যাদের ঠান্ডা বা শ্বাসকষ্টর সমস্যা রয়েছে তারা কলা খেলে সমস্যার বেড়ে যেতে পারে।
- সকালে খালি পেটে কলা খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- কলাতে সুগার থাকায় বেশি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কলাতে প্রচুর পরিমাণ শর্করা রয়েছে যা দাঁতের ক্ষতি হয়।কলায় পটাশিয়াম থাকায় অতিরিক্ত খেলে হাইপারক্যালোমিয়া আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। যার কারণে শরীর হয় ক্লান্ত ও অনিয়মিত হৃদপিন্ডের স্পন্দন দেখা দিতে পারে।
- পাকা কলাতে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান যার ফলে বেশি বেশি কলা খেলে মস্তিষ্কের কাজে ব্যাঘাত ঘটে ও দেহে ক্লান্তি ভাব আসে। এবং সব সময় ঘুম পাবে।
প্রতিদিন কি পরিমাণ কলা খাওয়া উচিত
কলা উপকারী ফল বলেই যে বেশি খেতে হবে এমন না। শুধু কলা না যেকোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক না। এতে উপকারের চাইতে ক্ষতি আরও বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত খেলে আমাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে যা আমরা কলার ক্ষতিকর দিক পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই প্রত্যেকেই নিয়মমত যেকোন খাবার গ্রহণ উচিত হবে। তাহলে প্রতিদিন কি পরিমাণ কলা খাওয়া উচিত?
দিনে কয়টা কলা খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই এ বিষয়ে সবারই জানা আবশ্যক। চলুন জেনে নেই, শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বেশি কলা খাওয়ার যে ক্ষতি তা থেকে রক্ষা করতে প্রতিদিন ১-২ কলা আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট হবে। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে সবাই বিরত থাকবেন।
শেষ কথা - কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
কলা খাওয়া ভালো তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেকে আছে কি পরিমাণ কলা খেতে হবে এবং অতিরিক্ত কলা খেলে শারীরিক কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তাদের জন্য আমাদের আজকের কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবে। এতে কলা খাওয়া থেকে সচেতন হবে এবং উপকৃত হবে। আর এটাই ড্রিমসসেফ ওয়েবসাইটের মূল লক্ষ্য যে আমাদের আর্টিকেল পড়ে যেন সবাই উপকৃত হয়।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url