গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানুন
গর্ভবতী সময় সহবাসের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিনআপনারা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় তা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই
আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। এবং আরো জানুন গর্ভাবস্থায় মধু খেলে কি হয়,
গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না ইত্যাদি
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার
উপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এ বিষয়ে গর্ভাবস্থা
মহিলাদের জন্য জরুরি। তাই দেরি না করে বিস্তারিত জানতে পড়ে ফেলুন গর্ভাবস্থায়
মুড়ি খেলে কি আজকের আর্টিকেলটি।
গর্ভাবস্থায় মধু খেলে কি হয়
বলা হয় যে, ১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধু দেওয়া উচিত নয়। তাই অনেকেই বলে
থাকেন গর্ভাবস্থায় মধু খাওয়া উচিত নয়। আসলে এই সময়ে সাধারণ খাবারের উপরও
বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তাই এসব মাথায় রেখে মাঝে মাঝে কাঠগড়ায় মধুকেও উঠানো
হয়। গর্ভাবস্থায় মধু খাওয়া উচিত কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমরা সরাসরি
গাছ কাটা মধু খাই। যেহেতু এগুলি প্রক্রিয়াজাত করা হয় না, তবে সরাসরি খাওয়া হয়
তাই মধুতে এক ধরণের বোটুলিজম ব্যাকটেরিয়া থাকে।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরা ও মধু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
মধুতে থাকা এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বোটুলিনাম নিউরোটক্সিন নামক
পদার্থ তৈরি করে। যা গর্ভাবস্থায় খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু এতে আক্রান্ত হওয়ার
সম্ভাবনা কম। ইমিউন সিস্টেম এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
গর্ভাবস্থায়, এই স্পোর বা তাদের বিষাক্ততা ভ্রূণকে প্রভাবিত করার কোন ঝুঁকি নেই।
কারণ ব্যাকটেরিয়া প্লাসেন্টা দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। এটি এই ক্ষতিকারক
অ্যান্টিজেনগুলিকে অতিক্রম করতে এবং ভ্রূণের কাছে পৌঁছাতে দেয় না।
এইভাবে এটিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির পুষ্টি
বিভাগের অধ্যাপক স্যান্ডি প্রক্টর বলেছেন, ১ বছরের বেশি বয়সী এবং স্বাস্থ্যকর
প্রাপ্তবয়স্করা, গর্ভবতী মহিলা সহ নিরাপদে মধু খেতে পারে। কারণ তাদের প্রতিরোধ
ব্যবস্থা মধুতে থাকা যেকোনো ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে।"
গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়? গর্ভাবস্থায় মুড়ি খাওয়ার অনেক উপকারিতা
রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কী হয় তা যদি আপনি না জানেন, তাহলে এখনই জেনে
নিন। কারণ গর্ভবতী মায়ের শরীরে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন পরিবর্তন হয় এবং এই
পরিবর্তনের কারণে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির অভাব হয়। যার কারণে নতুন শরীরে সমস্যা
দেখা দেয়। কিন্তু আপনি যদি জানেন গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কী হয়।
আরও পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও মিনারেলের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতেও মুড়ি অবদান রাখে। যা আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু এ বিষয়ে প্রত্যেকেরই ধারণা রাখা জরুরী। তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনত অবলম্বন করার সহজ হবে। এখন চলুন জেনে নেই, গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়। গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খান। কারণ-
- গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির ঘাটতি বেশি হয় এবং গর্ভাবস্থায় এই খনিজগুলির চাহিদা বেড়ে যায়। তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থায় মুড়ি খান, তাহলে মুড়ি ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজগুলির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে এবং গর্ভাবস্থায় মুড়ি আপনাকে সুস্থ থাকতেও উপকার করবে।
- মুড়িতে অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকায় মুড়ি খেলে গর্ভাবস্থায় আ্যসিটিক সমস্যা কমে যায় এবং পেটে আ্যসিটিক মাত্রা কম থাকায় বমি বা বমিভাব অনেকটাই কমে যায়।
- এতে যথেষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা তাদের শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের উপস্থিতি গর্ভবতী মহিলাদের হাড় গঠনে সহায়তা করে এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- তাছাড়া গর্ভবতী মায়ের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিনের ঘাটতি থাকে তাই গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে মুড়ির মাধ্যমে এক খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়।
- গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খাবার শরীরে প্রবেশ করায় গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির ঘাটতি হয় না, যার কারণে রোগ শরীরে আক্রমণ করতে পারে না।
- তাই গর্ভাবস্থায় মুদ্রি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকে।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু
খাবারের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় কিছু খাবারে
স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশংকা থাকার কারণে এসব খাবার গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত
থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবেনা এ বিষয়ে গর্ভবতী মহিলা এবং
পরিবারের সকল সদস্যকে জানা জরুরী। গর্ভঅবস্থায় যা যা খাওয়া উচিত হবে না তা হল;
- কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস, ডিম এবং সামুদ্রিক খাবারে সালমোনেলা ই-কোলাই রয়েছে। যাতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যেমন- কোলাই বা লিস্টিরিয়া, যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
- দুগ্ধজাত পণ্য, পনির এবং জুসে লিস্টেরিয়ার মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক হতে পারে।
- কিছু কিছু মাছ আছে যেগুলোতে পারদ বেশি থাকে। পারদ একটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। উচ্চ পারদযুক্ত মাছ যেমন- হাঙ্গর, সোর্ডফিশ, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইলফিশ এড়িয়ে চলতে হবে। টুনার মত অন্যান্য মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কাঁচা বা কম রান্না করা শেলফিশ এ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থাকতে পারে যা খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- আপনার কফি খাওয়ার খুব অভ্যাস ছিল। কিন্তু গর্ভধারণের পর এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। এই সময়ে দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি চা বা কফি পান করলে শরীরে সমস্যা হতে পারে। এমনকি অনাগত শিশুর ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। তাই আপনি দিনে ১ কাপ কফি খেতে পারেন। এর বেশি খাবেন না।
- বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসা ফল এবং সবজিতে টক্সোপ্লাজমা বা অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে। তাই খাওয়ার আগে সমস্ত পণ্য ভালভাবে ধুয়ে নিন।
- অ্যালকোহল সবসময় খারাপ। বিশেষ করে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত মদ্যপান মৃতপ্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি ভ্রূণেরও সঠিক বিকাশ হয় না। এটি ভ্রূণ অ্যালকোহল সিন্ড্রোমের কারণ হতে পারে। এতে জন্মের পর শিশুর হার্টের সমস্যাসহ একাধিক অঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এমনকি শিশুর আইকিউ কমে যেতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ সম্পর্কে
পরামর্শের জন্য সব সময় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। প্রতিটি গর্ভাবস্থা
ভিন্ন, এবং পৃথক পরিস্থিতিতে ভিন্ন হতে পারে। একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
করা মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা, যা নাইজেলা স্যাটিভা বা কালো বীজ নামেও পরিচিত। কালোজিরার স্বাস্থ্য
উপকারিতাগুলির কারণে শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে
আসছে। যাইহোক, আপনি যদি গর্ভবতী হন তাহলে কালোজিরা সহ আপনার খাদ্য তালিকায় কোনো
নতুন খাবার অন্তর্ভুক্ত করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ
গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে কালোজিরা বিভিন্ন উপকার
করে থাকে বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খাওয়ার
উপকারিতা গুলো হল;
- পুষ্টিতে ভরপুর কালোজিরার বীজে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি সহ খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং পটাসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন- ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এসব পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যা গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে কালোজিরার বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- কালোজিরা পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে যা হজমে সহায়তা করতে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে ব্যবহৃত হয়।
- কালোজিরার বীজে এমন যৌগ রয়েছে যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যা নির্দিষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
- গবেষণায় বলা হয়েছে যে, কালোজিরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী হতে পারে।
- কালোজিরার খাওয়ার ফলে উপরিউক্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে গর্ভাবস্থায় নিরাপত্তায় মা এবং শিশু উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কালোজিরা খাওয়ার আগে গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। উপকারিতাগুলো হল;
চোখের দৃষ্টিঃ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় গর্ভাবস্থায় গাজর আপনার
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এটি শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় আপনার চোখ এবং
দৃষ্টিশক্তির যত্ন নেয় না, এটি ভ্রূণের চোখের বিকাশের জন্যও উপকারী।
ইমিউন সিস্টেমঃ গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা আপনার ইমিউন
সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে খুবই উপকারী। গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে
যায়। তাই প্রতিদিন গাজর খেলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য
করে।
ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করেঃ গাজর খাওয়া ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য
খুবই উপকারী। কারণ গাজরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। যা ভ্রূণের দাঁত ও
হাড় গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাজরে থাকা ক্যালসিয়াম মায়ের হাড়কে ভালো
রাখতে সহায়তা করে।
রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ গর্ভাবস্থায় আপনাকে প্রতিদিনের খাদ্য
তালিকায় গাজর রাখতে হবে। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ
গাজর শুধু আয়রন সমৃদ্ধ নয়, এতে ভিটামিন সি ও থাকে। যা শরীরে আয়রন শোষণে
সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভবতী মহিলাদের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে
একটি হল কোষ্ঠকাঠিন্য। গাজরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা নিয়মিত খাওয়ার
ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। গাজর হজমের অন্যান্য সমস্যা দূর
করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় শিরায় টান ও খিচুনি রোধঃ অনেক গর্ভবতী মহিলা তাদের
গর্ভাবস্থায় ক্র্যাম্পিং বা পেশী শক্ত হয়ে যেতে পারে। যদিও গর্ভাবস্থায় এগুলি
খুব সাধারণ সমস্যা। তবে এগুলি খুব অস্বস্তিকর এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। গাজরে
ফসফরাস থাকে যা গর্ভাবস্থায় পেশীগুলির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং খিঁচুনি
বা ক্র্যাম্পে রোধে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরীঃ কিছু মহিলাদের গর্ভকালীন
উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় জটিলতার কারণ হতে পারে। তবে নিয়মিত গাজর
খেলে গর্ভকালীন সময় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ভ্রূণের হাড় এবং তরুণাস্থি গঠনে সাহায্য করেঃ গাজরে ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা
আপনার বাচ্চার সুস্থ হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ।
গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্য তালিকা গাজরের রস রাখুন। এতে আপনার বাচ্চার জন্য হাড়
গঠনে সহায়ক হবে।
ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করেঃ গাজরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বি
ভিটামিন এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে যা আপনার বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের
বিকাশের জন্য উপকারী। প্রতিদিন গাজর খেলে স্নায়বিক জন্মগত ত্রুটি যেমন- স্পাইনা
বিফিডা সহ একটি শিশুর জন্মের সম্ভাবনা কমাতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ গাজরে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, যা
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিটা-ক্যারোটিন একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এবং আপনার শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলের প্রভাব
কমিয়ে
ক্যান্সারের
ঝুঁকি থেকে আপনাকে এবং আপনার শিশুকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভধারণের পর গর্ভবতী সন্তানের কথা বিবেচনা করে প্রতিটি নারীর খাবারের প্রতি
সচেতন হওয়া উচিত। এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়।
বিশেষ করে ৯টি ফল যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। কারণ কিছু ফল আছে যা গর্ভপাত
ঘটাতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কোন ৯টি ফল খাওয়া উচিত নয়-
আনারসঃ প্রথম ত্রৈমাসিকের গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কারণ আনারস খেলে মারাত্মক জরায়ু সংকোচন হতে পারে। এটি গর্ভপাতের কারণও হতে পারে।
আনারসে আছে ব্রোমেলিন। এটি একটি এনজাইম যা প্রোটিন ভেঙ্গে দেয়। ফলস্বরূপ, জরায়ু
নরম হয়ে যায় এবং অকাল প্রসব হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কখনই আনারস খাবেন না।
আঙ্গুরঃ গর্ভাবস্থায় আঙ্গুরও এড়িয়ে চলতে হবে। সবুজ এবং কালো আঙ্গুর
উভয়ই ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে এ নিয়ে রয়েছে মিশ্র মতামত। কারণ আঙ্গুরের
রেসভেরাট্রল যৌগ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কালো
আঙ্গুরের চামড়া হজম করা কঠিন হতে পারে। কারণ এ সময় পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে।
তেঁতুলঃ গর্ভাবস্থায় টক কিছু খেতে চাইলে তেঁতুলের কথা ভাবতে পারেন। তবে
গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়াও ক্ষতিকর হতে পারে। তেঁতুল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যা
গর্ভবতী মহিলাদের এড়িয়ে চলা উচিত।
এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে শরীরের প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন হ্রাস করে। এর ফলে
গর্ভপাতও হতে পারে। এমনকি ভ্রূণের কোষও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার
প্রথম ট্রাইমেস্টারে খুব বেশি তেঁতুল খাবেন না। এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
পেঁপেঃ পেঁপেতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন থাকলেও এই ফলটি গর্ভবতী
মহিলাদের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ পেঁপে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। এই ফল ক্ষীর
সমৃদ্ধ। যা জরায়ু সংকোচন, রক্তপাত এবং গর্ভপাত ঘটাতে পারে। এটি ভ্রূণের বিকাশকেও
ব্যাহত করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা পাকা পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলায়
ভালো।
কলাঃ গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা ফলের তালিকায়
কলাও রয়েছে। বিশেষ
করে গর্ভাবস্থায়
অ্যালার্জি বা
ডায়াবেটিস আছে এমন মহিলাদের জন্য বিশেষজ্ঞরা কলা নিষিদ্ধ করেছেন। কলাতে কাইটিন
থাকে। এটি একটি ল্যাটেক্স জাতীয় পদার্থ। যা একটি পরিচিত অ্যালার্জেন। এটি শরীরের
তাপ বাড়ায়। তাই কাইটিনে অ্যালার্জিযুক্ত মহিলাদের কলা থেকে দূরে থাকতে হবে।
এছাড়াও, কলাতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কলা খাওয়া
এড়িয়ে চলা উচিত।
তরমুজঃ গরমে তরমুজ খেতে কম-বেশি সবাই পছন্দ করে। তরমুজ শরীর থেকে সব ধরনের
টক্সিন দূর করার পাশাপাশি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম। কিন্তু এর খারাপ দিকও
আছে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া শরীরের সব ধরনের টক্সিন ধ্বংস করে এবং
ভ্রূণের ক্ষতি করে।যদিও এই ফলটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খারাপ নয়, তবে এটি শরীরের
উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারে। কখনও কখনও
তরমুজের মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রয়োজনীয় পুষ্টির সাথে শরীর থেকে বিষাক্ত
পদার্থগুলিকে বের করে দিতে পারে। এটি শরীরকে শীতলও করে। ফলে গর্ভবতী মহিলাদের
ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা
জরুরি।
খেজুরঃ খেজুর খুবই
পুষ্টিকর একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। আপনি কি জানেন যে
গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ ফলের তালিকায় খেজুরও রয়েছে। প্রধান কারণ এই ফলটি শরীরকে
গরম করে। এটি জরায়ুর পেশী নিয়ন্ত্রণ করে জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। তাই
গর্ভাবস্থায় কখনই অতিরিক্ত খেজুর খাবেন না।
হিমায়িত খাবারঃ গর্ভবতী মহিলাদের দীর্ঘ সময় ধরে হিমায়িত বা শুকনো ফল
খাওয়া উচিত নয়। হিমায়িত বেরি তাদের মধ্যে একটি। গর্ভাবস্থায় সবসময় তাজা ফল
খাওয়া উচিত। হিমায়িত খাবারে ফরমালিন বা প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে। এ কারণে এ
ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। এটি আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্যই বিষাক্ত হতে
পারে।
টিনজাত টমেটোঃ টিনজাত টমেটোতে বিভিন্ন সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় সব ধরনের টিনজাত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে ক্ষতিকারক
প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে। যা দীর্ঘদিন খাবার ভালো রাখতে ব্যবহার করা হয়।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
মাতৃত্ব প্রতিটি মেয়ের মধ্যে আলাদা অনুভব করে। মাতৃত্ব নারীর পূর্ণতা।
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মেয়েই কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই গর্ভাবস্থায়
সাবধানে চলাফেরা করা উচিত এবং সঠিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। কিছু খাবার
আছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উপকারী এবং কিছু খাবার গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা
উচিত। গর্ভবতী মা ও অনাগত শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু সবজি এড়িয়ে চলতে হবে।
যেমন - গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের কাঁচা সবজি না খাওয়াই ভালো।
কাঁচা শাকসবজিতে ময়লা বা বিভিন্ন পরজীবী থাকতে পারে যা গর্ভবতী মা এবং অনাগত
সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। রাস্তার ধারে বা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মসলা দিয়ে
কাঁচা ফল বা সবজি বিক্রি করতে দেখি। বেড়াতে গিয়ে বা হাঁটার সময় আমরা রাস্তা
থেকে আনারস, পেয়ারা, শসা, আমড়া ইত্যাদি কিনে খাই। গর্ভাবস্থায় বাইরের এসব
খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
এসব খাবার ঢেকে রাখার ফলে তাদের মধ্যে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। এছাড়াও
বাড়িতে অনেকক্ষণ সময় ধরে কেটে রাখা ফল বা সবজি না খাওয়াই ভালো। এখন চলুন
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তা সম্পর্কে জেনে নেই.
পেঁপেঃ পেঁপে খুবই উপকারী একটি সবজি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়া
উচিত নয়। কারণ পেঁপেতে ল্যাটেক্স নামক উপাদান থাকে যা অনাগত সন্তানের ক্ষতি করতে
পারে।
করলাঃ করলা শরীরের জন্য আরেকটি প্রয়োজনীয় সবজি। করোলায় রয়েছে
গ্লাইকোলাইসিস, সেপনিক, ম্যারোডিসিন নামক ক্ষতিকর উপাদান, যা গর্ভাবস্থায়
গর্ভবতী মহিলা এবং অনাগত শিশুদের ক্ষতি করে।
সজিনাঃ সজিনা একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি। কিন্তু এতে 'আলফা
সিস্টেরল' নামক একটি উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তাই
গর্ভাবস্থায় সজিনা না খাওয়াই ভালো।
অ্যালোভেরাঃ অনেকেই সৌন্দর্যের জন্য বা পেট পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত
অ্যালোভেরার জুস খান। কিন্তু গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা খাওয়া উচিত নয় কারণ
অ্যালোভেরা গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
বেগুনঃ গবেষণায় দেখা গেছে, বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোহরমোন।
বেগুন মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মায়েরা প্রতিদিন বেগুন
খান তাদের মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মোটেও ভালো নয়।
অনেক সময় দেখা যায় বেগুন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বেগুন খেলে অ্যালার্জির সমস্যা
হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেগুন এড়িয়ে চলাই ভালো।
সালাদঃ আমরা বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি দোকানে কেনা সালাদ খেতে
ভালোবাসি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় যা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের
জীবাণু থাকতে পারে বা ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এটি গর্ভবতী মা এবং অনাগত
সন্তানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ কথা - গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা মহিলাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় গর্ভাবস্থায়
বিভিন্ন খাবার গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যা আমাদের সন্তান সম্ভাব্য প্রতিটা
নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা চেষ্টা করবেন এই সময়টাতে সচেতন থাকার। কোন
খাবার খেলে শরীরের জন্য উপকার আবার কোন খাবার খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা
সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা।
তাই আশা করছি, আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে এ বিষয় সম্পর্কে সঠিক
ধারণা পেয়েছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ড্রিমসসেফ
আইটির সাথেই থাকুন।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url