লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কে জানুনআপনারা লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেছেন? তাহলে জেনে নিন লিভার সিরোসিস কি, লিভার সিরোসিস কেন হয়, লিভার সিরোসিস এর লক্ষণ এবং লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। লিভার সিরোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আজকের আর্টিকেল লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় মনোযোগ সহ পড়ুন।
লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধি। অনেক কারণে লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। কিভাবে লিভার সিরোসিস প্রতিরোধ করা যায় তা সম্পর্কে তুলে ধরা হলো লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় আর্টিকেলটিতে।
লিভার সিরোসিস কি
লিভার সিরোসিস মারাত্মক একটি রোগ। হেপাটাইটিস বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে লিভারে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শেষ পর্যায় হলো লিভার সিরোসিস। বিভিন্ন রোগব্যাধি বা মদ্যপান এর কারণে লিভারে যেসব ক্ষতি হয় লিভার সেই ক্ষতি দূর করার জন্য চেষ্টা করে। চেষ্টা করার ফলে লিভারে ফাইব্রোসিস গঠিত হয়ে থাকে।
যার কারণে লিভারের কার্যক্ষমতার ব্যাঘাত ঘটে। সিরোসিস একবার হলে লিভারে যে ক্ষতি হয় তা আগের জায়গায় ফিরে আসা সম্ভব হয় না। তবে হ্যাঁ যদি প্রাথমিক অবস্থায় সিরোসিস সনাক্ত করা যায় তাহলে চিকিৎসা করার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব।
লিভার সিরোসিস কেন হয়
লিভার সিরোসিস কেন হয় এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজর সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন,
- দীর্ঘস্থায়ী ভাইরাস হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' এছাড়াও হেপাটাইটিস 'ডি' রোগে আক্রান্ত থাকলে।
- ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা লিভারে চর্বি জমলে।
- জেনেটিক ডিজিজ যাকে উইলসন্স ডিজিজ বলে এর কারণে।
- অটোইমিউন ডিজিজ।
- যেসব ওষুধে লিভারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে দীর্ঘদিন যাবত গ্রহণের ফলে।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
লিভার সিরোসিস হলে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তা হল;
- শরীরে ক্লান্তি ভাব দেখা দিবে।
- রুচি কমে যাবে।
- ধীরে ধীরে ওজন কমে যাবে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব।
- শরীরে চুলকানি হওয়া।
- ত্বকে ও চোখে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
- পা ফুলে যাওয়া।
- পেটে পানি জমা।
- অল্পতেই রক্তপাত বা ক্ষত হয়ে যাওয়া।
- নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় ছাড়াই মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন দুর্বলতা, ও স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া।
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
লিভার বা যকৃতির বিভিন্ন সমস্যা আমাদের শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। তেমনই লিভারের সমস্যার কারণে আমাদের মৃত্যুও হতে পারে। লিভারের দীর্ঘদিনের ক্ষত থেকে লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। যার কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে ধারণা করে থাকেন অ্যালকোহলে কারণে লিভার সিরোসিসের মতো ভয়ানক ব্যাধি হয়ে থাকে। তবে গ্যাস্ট্রোএন্টেরলজিস্টদের মতে, অ্যালকোহল ছাড়াও মানুষের কিছু দৈনিন্দ্য জীবনের বদঅভ্যাসগত কারণেও লিভার সিরোসিস এ আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, লিভার কিছুটা নষ্ট হলেও পরবর্তীতে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে আবার পুনরায় লিভারের স্বাস্থ্য ভালো হয়ে যায়। তার জন্য প্রয়োজন সতর্কতা অবলম্বন করা তাহলে লিভার সিরোসিসের ঝুকি এড়ানো সম্ভব। লিভারের রোগে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাহলে চলুন, লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি কি জেনে নেই।
অ্যালকোহলঃ লিভার সিরোসিস হওয়ারও অন্যতম কারণ হলো মাত্রা অত্যাধিক অ্যালকোহল গ্রহণ করা। এজন্য লিভারকে সুস্থ রাখতে এবং লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তি পেতে অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে একেবারে দূরে থাকবেন।
হেপাটাইটিসঃ লিভার সিরোসিস হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো হেপাটাইটিস ভাইরাস। লিভার সিরোসিস প্রতিরোধ করতে চাইলে অবশ্যই ছোট বড় সবাইকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা দিতে হবে।
তৈলাক্তক যুক্ত খাবার পরিহারঃ আমরা তৈলাত্বক যুক্ত ভাজাপোড়া খাবারের দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকি। বলতে গেলে খেতে অনেক পছন্দ করি। আবার অনেকে আছে অতিরিক্ত ঝাল মসলাযুক্ত খাবার খেয়ে থাকে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। যার ফলে লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাক-সবজি ফলমূল রাখতে হবে এবং তেল ও মসলা কম ব্যবহার করতে হবে।
ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমঃ শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত ভূমিকা রাখি। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, কাজকর্ম, ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরে লিভার ফ্যাট জমে না ফলে লিভার সুস্থ রাখে।
পানিঃ পানি আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে যার ফলে শরীর সুস্থ রাখে। তাই উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস করা। শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ৫-৬ লিডার পানি পান করা উচিত।
পেঁয়াজ ও রসুনঃ কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন পেঁয়াজ রসুন খাদ্য তালিকায় রাখুন।
ওষুধঃ ওষুধ ব্যবহারে সর্তকতা অবলন করা উচিত। এমন কিছু ব্যথা নাশক ও অন্যান্য ওষুধ রয়েছে যা সেবনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে লিভারের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যার কারণে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। নিজের ইচ্ছায় কোন ওষুধ সেবন করবেন না ওষুধ সেবন করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন।
লিভার সিরোসিস রোগী কত দিন বাঁচে
লিভার সিরোসিস হওয়ার সাথে সাথেই যে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে তা কিন্তু না। লিভার সিরোসিস হলে যে কোন রোগী মারা যাবে এমন কিন্তু না। বর্তমান আধুনিক চিকিৎসার ফলে লিভার সিরোসিস থেকে বাচা সম্ভব। যা আমাদের বাংলাদেশে চিকিৎসা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে রয়েছে কার্যকরী ভ্যাকসিন। একজন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর কিংবা ইপিআই সিডিউলে বাচ্চাদের হেপাটাইটিস বি টিকা দিয়ে থাকে। যা একজন বাচ্চাকে সারা জীবন সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
তবে হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে কোন টিকা নেই। এর থেকে সুরক্ষা পেতে অবৈধ বা অরক্ষিত যৌন মিলন পরিহার করা। যেকোনো ধরনের মাদক সেবন থেকে দূরে থাকা। সেলুনে সেভ করতে গেলে অন্য ব্যক্তির সেভ করা ব্লেট দিয়ে সেভ না করা অর্থাৎ সতর্কতা অবলম্বন করা। এছাড়াও দাঁতের চিকিৎসায় যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় তা জীবন মুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
লিভার সিরোসিস হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই জটিল রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। তার জন্য প্রয়োজন জীবন যাপনে বদ অভ্যাস গুলো পরিহার করা। যেমনঃ খোলা জায়গায় বা রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া দূষিত পানি, আখের রস, বিভিন্ন ফলের রস বা শরবত ইত্যাদি না খাওয়া। এসব খাওয়ার ফলে হেপাটাইটিস বিএবং ই এর সংক্রমণ হয়।
এভাবে যদি জন্ডিস আক্রান্ত হয় তাহলে লিভার সিরোসিস আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না।
ডাঃ শেখ মোঃ নূর-ই-আলম
সরকারি অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা।
লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার
মানব দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হচ্ছে লিভার। দেহ পরিচালনায় যত প্রক্রিয়া আছে তার সবগুলোর সাথেই লিভার জড়িত আছে। তাই শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে লিভারের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। লিভারের কোন রোগ বা সমস্যা যেমনঃ লিভার সিরোসিস হলে লিভার কে সুস্থ রাখতে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী। লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার হল;
- প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করা। যেমনঃ মাশরুম, স্পিরুলিনা।
- সবুজ শাকসবজি।
- ওটস
- সকল প্রকার মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ।
- সালাদ
- প্রতিদিন ডিম খেতে হবে।
- ভাত ও রুটি পরিমাণ মতো।
- দেশি মুরগি, কবুতর, কোয়েল পাখির মাংস ইত্যাদি।
- পরিমিত গরু ও খাসির মাংস চর্বি ছাড়া।
- গ্রিন টি।
- চা এবং কফি নিয়মিত খেতে পারেন।
- বাদাম।
- চিড়া, মুড়ি, বিস্কিট খাওয়া যাবে।
- টক দই, ঘি, মাখন।
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় - শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আপনারা লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে লিভার সিরোসিস কতটা ভয়ানক ব্যাধি। তবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব যদি তা পূর্বে সনাক্ত করা যায়। আর আমাদের জীবন যাপনে বদ অভ্যাস গুলো পরিহার করতে হবে। এবং সুস্থ শরীর এবং সুস্থ জীবন উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আর সবারই উচিত বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকে নেওয়া।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url