হাই প্রেসার কি - হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কি
আপনারা হাই প্রেসার কি, হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকে আমরা প্রেসার কত হলে শরীরের জন্য ভালো,প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই আর দেরি না করে হাই প্রেসার সংক্রান্ত সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের আজকের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আমাদের খুবই পরিচিত একটি নীরব ঘাতক রোগ হলো উচ্চ রক্তচাপ আবার অনেকে বলে হাই প্রেসার। হাই প্রেসার সম্পর্কে সচেতন বা ধারণা না থাকলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এজন্য হাই প্রেসার সম্পর্কে আমাদের সকলকে জানতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হাই প্রেসার কি - হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কি
প্রেসার কত হলে ভালো
আমরা অনেকেই ভেবে থাকি ১২০/৮০ থাকলে হয়তো সেটা স্বাভাবিক বা নরমাল প্রেসার।
কিন্তু একথা সম্পূর্ণ ভুল কারণ উপরের প্রেসার বা সিস্টোলিক প্রেসার ১৩০ এবং নিচের
প্রেসার যাকে আমরা ডায়াস্টোলিক প্রেসার বলে থাকি সেটা যদি ৮৫ থাকে সেটাও কিন্তু
নরমাল প্রেসার হয়। তাহলে কোনটা সঠিক উপরের প্রেসার যাকে আমরা সিস্টোলিক প্রেসার
বলে থাকি সেটা যদি ৯০ থেকে ১৪০ এর মধ্যে থাকে তাহলে সেটাকে নরমাল প্রেসার বলা
হয়।
আরও পড়ুনঃ চর্মরোগ প্রতিরোধ করার উপায় ২০২৩
এবং নিচের প্রেসার যাকে আমরা ডায়াস্টোলিক প্রেসার বলে থাকি সেটা যদি ৭০ থেকে ৯০
এর মধ্যে থাকে সেটা নরমাল। অর্থাৎ প্রেসার কত হলে ভালো বলা যায় তাহলে আপনাদের
জানার সুবিধার্থে বলতে পারি ১০০-১৩০/৭০-৮৫ এর মধ্যে থাকলে ভালো প্রেসার হিসেবে
ধরা হয়।তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ একজন
মানুষের শারীরিক কন্ডিশন,বয়সের উপর অনেক ক্ষেত্রে ডিপেন্ড করে।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনাদের মধ্যে যদি কারো প্রেসার অস্বাভাবিকভাবে সিস্টোলিক
প্রেসার এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ১৪০/৯০ এর উপর ওঠে আবার হঠাৎ করে অনেক নিচে
নেমে আসে তাদেরকে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ এসব মানুষদের ক্ষেত্রে ক্ষতির
প্রভাব বেশি থাকে। প্রেসার ১৪০/৯০ এর ওপর উঠলে অবশ্যই হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণের
জন্য চিকিৎসা নিতে হবে।
হাই প্রেসার কত প্রকার
আপনারা অনেকেই জানতে চান হাই প্রেসার কত প্রকার। অনেকেই জানি বা বলে থাকি হাই
প্রেসার আর লো প্রেসার। কিন্তু এর সঠিক নাম আমরা জানি না বা সঠিকভাবে বলতে পারি
না। তাহলে চলুন আজকে আমরা হাই প্রেসার কত প্রকার এবং কি কি তা সম্পর্কে জেনে নেই।
হাই ব্লাড প্রেসার সাধারণত দুই প্রকার;
- এসেনশিয়াল হাইপার টেনশন
- সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন
এসেনশিয়াল হাইপার টেনশন আবার দুই প্রকার;
- এসেনশিয়াল বিনাইন হাইপার টেনশন
- এসেনশিয়াল মেলিন্যান্ট হাইপার টেনশন
এসেনশিয়াল বিনাইন হাইপার টেনশনঃ আমাদের মধ্যে যাদের এসেনশিয়াল বিনাইন
হাইপার টেনশন রোগ হয় তাদের মধ্যে রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও কোন কষ্ট অনুভব করতে
পারে না। এছাড়াও অনেক রোগী আছে যাদের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে।
এসেনশিয়াল মেলিন্যান্ট হাইপার টেনশনঃ এসেনশিয়াল মেলিন্যান্ট হাইপার
টেনশন রোগে আক্রান্ত হয় বিশেষ করে যাদের বয়স সাধারণত ২০-৪০ এর মধ্যে। এই রোগের
কারণে রক্ত নষ্ট হয় এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ১০০-১৫০ পর্যন্ত হতে পারে। এবং যা
মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন এ পরতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর আশঙ্কা
থাকে।
সেকেন্ডারি হাইপার টেনশনঃ সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন সাধারণত বয়স্ক লোকের
মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেকেন্ডারি হাইপার টেনশনে আক্রান্ত হলে যত রক্তচাপের
প্রকার আছে তার তার মধ্যে এই প্রকার রক্তচাপ শতকরা ৮০ ভাগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে
বয়স্ক লোকের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ মারা যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপে কি কি রোগ হয়
উচ্চ রক্তচাপের ফলে আমাদের রক্তনালী দুর্বল হয়ে যায় রক্তনালী পাতলা হয়ে
বেলুনের মত ফুলে ওঠে সেটা হঠাৎ করে রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে। এর ফলে আমাদের
ব্রেনে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও রক্তনালীতে চর্বি জমা। সুস্থ
স্বাভাবিক রক্তনালি তার গায়ে চর্বি জমতে দেয় না। তবে উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে
ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। আর তখন রক্তনালীর গায়ে চর্বি কোলেস্টেরল এবং ক্যালসিয়াম
জমতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
এর ফলে চর্বি জমা বড় হয় এবং রক্তনালি সরু হয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা
যায় চর্বির গায়ে এসে রক্ত জমাট বাঁধে। একসময় এসে রক্তনালীর মুখ সম্পূর্ণটায়
বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন রক্ত আর সামনে যেতে পারে না। এটা খুব মারাত্মক সমস্যা।
আপনারা ব্রেন স্টোক বা হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনেছেন এইটা সেই ঘটনা। ব্রেনের
রক্তনালী বন্ধ হলে স্ট্রোক হয়।
আর একই মতো হার্টের রক্তনালি বন্ধ হলে হয় হার্ট অ্যাটাক। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবার চলুন উচ্চ
রক্তচাপে কি কি রোগ হয় জেনে নেই।
- হার্ট দুর্বল হয়ে যাওয়া
- কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া
- দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
- মাথা ঘোরা
- বুক ধরফর করা
- মাথা ব্যথা বা বমি বমি ভাব হওয়া
এগুলোর চেয়েও আরো মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার হলো এর নীরবতা। উচ্চ
রক্তচাপ যখন শরীরে দেখা দেয় কখন শরীরে কোন ধরনের ব্যথা বা সমস্যা সৃষ্টি করে না।
এক্ষেত্রে আমরা অনেকেই এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকি। এই সুযোগে হাই প্রেসার
আস্তে আস্তে শরীরের ক্ষতি করে থাকে। এবং হঠাৎ করেই দেখা দেয় ভয়ঙ্কর ব্যাধি।
হাই প্রেসার কি - হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কি
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ এই সমস্যাকে 'নীরব ঘাতক' বলা হয়ে থাকে। আমাদের
প্রায় প্রতিটা পরিবারে হাই প্রেসার আক্রান্ত রোগী লক্ষ্য করা যায়। হাই প্রেসার
বা উচ্চ রক্তচাপ শুধু যে বয়স্কদেরই হয় তা কিন্তু না মধ্যবয়স্ক থেকে শুরু করে
যে কোন বয়সের মানুষের হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যদি আপনারা সঠিকভাবে বুঝতে না
পারেন বা হাই প্রেসার সম্পর্কে ধারণা না থাকে তাহলে গুরুতর অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা
থাকে। তাই আপনাদের জন্য হাই প্রেসার কি - হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কি ইত্যাদি
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
হাই প্রেসার কিঃ হাই প্রেসার হচ্ছে একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের রক্তচাপ
থাকার কথা ১২০/৮০ অথবা এর কাছাকাছি। কিন্তু যদি দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি
অর্থাৎ ১৪০/৯০ কয়েকদিন স্থির থাকে তাহলে চিকিৎসা বিদ্যায় সেটা কে হাই প্রেসার
বা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে চিহ্নিত করে।
হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কিঃ আমাদের সবার কাছে হাই প্রেসার বা উচ্চ
রক্তচাপ একটি পরিচিত রোগ। হাইপারটেনশন হলো এক ধরনের সাইলেন্ট কিলার। হাই প্রেসার
বা উচ্চ রক্তচাপ ঠিক সময়ে ধরতে না পারলে বা বুঝতে না পারলে হাই প্রেসার বা উচ্চ
রক্তচাপের ফলে দেহের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। এজন্য হাইপ্রেসার হওয়ার কারণ কি এই
সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।
এর পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে। এবং হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ হলে নিয়মিত
পরীক্ষা করতে হবে। তাই নিচে আমরা আপনাদের জন্য হাই প্রেসার হওয়ার কারণ কি তা
তুলে ধরলাম।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে।
- নিয়মিত ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া।
- নিয়ম করে ঠিকমতো ঘুম না পারা।
- অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির।
- ধূমপান করা এবং অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করা।
- শারীরিক পরিশ্রম না করা।
- পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কারো থাকলে।
- দুশ্চিন্তা করা ইত্যাদি।
প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ কি কি
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ সঠিকভাবে নির্ণয় বা চিকিৎসা করা না গেলে মারাত্মক
স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে থাকে। হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক ও
স্টকের মত মারাত্মক রোগের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যার ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা উচ্চ রক্তচাপে বা হাই প্রেসারে আক্রান্ত হলেও তারা
সে সম্পর্কে বুঝতে পারে না।
গবেষণায় দেখা যায়, হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগী
জানে না যে তারা এ রোগে ভুগতেছে। এজন্য হাই প্রেসার সম্পর্কে সবার সঠিক ধারণা
থাকতে হবে। শরীরের মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে যে প্রেসার বাড়ছে। এবার
চলুন জেনে নেওয়া যাক,প্রেসার বেড়ে যাওয়া লক্ষণ কি কি নিচে তা তুলে ধরা হলো;
- মাথা ঘোরা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- মাথা ভার থাকা
- মাথা ব্যথা করা
- হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
- বুকে ব্যথা
- ক্লান্তি অনুভব করা
- হাত পা - কাঁপুনি
- অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পরে
- বিভ্রান্তি হওয়া ইত্যাদি
হাই প্রেসার রোগীর খাবারের তালিকা
বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার রোগীদের সংখ্যা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এর কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন,অতিরিক্ত ওজন,এবং আমাদের নিয়ম করে খাদ্য
অভ্যাসের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের
পাশাপাশি খাদ্য অভ্যাসে বেশি করে নজর দেওয়া উচিত। এজন্য আমরা আপনাদের জন্য হাই
প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের কি কি খাবার খাওয়া দরকার তা নিচে হাই প্রেসার
রোগীর খাবারের তালিকা দেওয়া হলো;
- টক দই খেতে পারেন
- মাছ খেতে পারেন তবে তৈলাক্ত মাছ এড়িয়ে যান।
- যেকোনো খাদ্য তালিকায় লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
- প্রতিদিন ফল খেতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যেসব ফল।
- সকালে খালি পেটে কাঁচা বাদাম যেমনঃ আখরোট,কাজুবাদাম খেতে পারেন।
- চিয়া বীজ খেতে পারেন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার যা রক্তচাপ কমায়।
- উচ্চ রক্তচাপ ঘুমাতে খাদ্য তালিকায় পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম রয়েছে এমন খাবার রাখতে হবে।
- প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সবজি রাখতে হবে। বিশেষ করে পালং শাক পালং শাকে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,এবং ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকায় তা হাই প্রেসার এর মাত্রা কমাতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক,আজকে আমরা আপনাদের সুবিধার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হাই প্রেসার সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে কি কি রোগ হয়,হাই প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণসহ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা সম্পর্কে আজকের লেখার মাধ্যমে আলোচনা করেছি। আশা করছি,এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারাও উপকৃত হবেন। ড্রিমসসেফ আইটির সাথেই থাকুন ধন্যবাদ!
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url