মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক,আপনারা মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। আজকে আমরা মাথা ব্যথা কত প্রকার, মাথা ব্যথা হলে করণীয় কি ইত্যাদি সম্পর্কে আজকের লেখাটি পড়ে জেনে নেব। এখন চলুন মাথাব্যথা সম্পর্কিত সকল তথ্য ও উপায় নিয়ে নিচে আলোচনা শুরু করা যাক।
আমাদের সবারই মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে। আমরা সবাই জানি,মাথা ব্যথার যন্ত্রণা কতটা কষ্টদায়ক। এই সমস্যা সাধারণত আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের উপর নির্ভরশীল। আপনি চাইলে ডিসিপ্লিন জীবনযাপন করে এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মাথা ব্যথা কত প্রকার
আমাদের মাথা ব্যথা কম বেশি সবারই হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তা
স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে থাকি।আবার অনেক সময় আমরা কম বেশি মাথা ব্যথা হলেই মাথা
ব্যথা ট্যাবলেট খেয়ে থাকি।যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।কারণ
মাথাব্যথা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।মাথা ব্যাথা প্রধানত ২ প্রকার হয়ে থাকে।
- প্রাইমারি হেডেক
- সেকেন্ডারি হেডেক
প্রাইমারি হেডেকঃ
- টেনশন কিংবা দুশ্চিন্তা জনিত মাথাব্যথা
- মাইগ্রেন
- ক্লাস্টার
সেকেন্ডারি হেডেকঃ
- সাইনোসাইটিস
- ব্রেন টিউমার
- মাসটয়ডাইটিস
- গুলকোমার
- স্টোক এবং
- মাথায় আঘাত জনিত
- মাথায় রক্তক্ষরণ
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি
আমরা প্রত্যেকেই মাথা ব্যথায় ভুগে থাকি। কারো কম আবার কারো বেশি মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। আমরা জানি যে,মাথা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আবার অনেকের ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয়। আজকে আমরা জানবো ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি হতে পারে তা সম্পর্কে।
- মাইগ্রেন
- রোগ
- উচ্চ রক্তচাপ
- চোখের সমস্যা
- মানসিক সমস্যা
- মাদকাসক্ত
মাইগ্রেনঃ মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা প্রাথমিক হেডেকের অন্তর্ভুক্ত। মাইগ্রেনের কারণে মাথাব্যথা হলে মাথার অর্ধেক ব্যথা করবে। মাইগ্রেন দীর্ঘস্থায়ী ঘন ঘন মাথা ব্যথার রোগ। এটি শিশু কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবার মাঝে লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি মেয়েদের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ চর্মরোগ প্রতিরোধ করার উপায়
রোগঃ বিভিন্ন রকমের রোগ রয়েছে যার কারণে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এবং তা ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।যেমনঃ
- অতিরিক্ত জ্বর
- সর্দি -কাশি
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- ঘুম কম হওয়া
- আবার অতিরিক্ত বেশি ঘুম হওয়া
- অতিরিক্ত শরীর ক্লান্ত
উচ্চ রক্তচাপঃ আমরা যারা কোন কারণে অতিরিক্ত টেনশন করে ফেলি তখন মাথার রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আর যদি রক্তচাপ বেড়ে যায় তখন ঘন ঘন মাথা ব্যাথা হয়।
চোখের সমস্যাঃ আমাদের অনেকেরই চোখের সমস্যা হয়ে থাকে। যেমনঃমায়োপিয়া,চোখের স্নায়ুর প্রদাহ,গুলকোমার এবং রেট্টোবালবার ইত্যাদির কারণে চোখের উপর চাপ বেশি পরে। আর তখনই ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে পারে।
মানসিক সমস্যাঃ আমাদের জীবন যাপনে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে বিভিন্ন
টেনশন বা দুশ্চিন্তা করে ফেলি। যার কারণে মাথার উপর চাপ পড়ে যায়। ফলে মাথা
ব্যথা হবে এটাই স্বাভাবিক।
মাদকাসক্তঃ আমরা জানি,বর্তমান সমাজে মাদকাসক্ত গ্রাস করে নিয়েছে। ধূমপান অ্যালকোহল জাতীয় পানি ইত্যাদির কারণে আমাদের মাথার উচ্চ রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে।
এছাড়াও ব্রেন টিউমার,ক্লাস্টার,হরমোন জনিত সমস্যা,এবং বিভিন্ন উত্তেজক ওষুধ সেবন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঔষধের কারণেও মাথা ব্যথা হয়ে থাকে।
মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
আমাদের বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা হয়ে থাকে।যার অন্যতম কারণ মাইগ্রেন,টেনশন কিংবা দুশ্চিন্তা। এছাড়াও অনেক কারণেই আমাদের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। মাথা ব্যথার যে তীব্র যন্ত্রণা যখন হয় তখন আমরা ঠিকই বুঝতে পারি। আর আমাদের অনেকের মধ্যে একটা বদ অভ্যাস আছে। তা হল যখনি মাথা ব্যথা শুরু হয় তখনই আমরা মাথাব্যথা দূর করার জন্য অল্পতেই মাথা ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ খেয়ে থাকি তা মোটেও উচিত না। কারণ আমরা জানি মাথা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
তাই যে কোন ওষুধ খেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব আমাদের শরীরে পরতে পারে। এজন্য আজকে আমরা আপনাদের জন্য মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে মাথা ব্যথা দূর করা যায় তা সম্পর্কে আলোচনা করবো। এবার চলুন,জেনে নেই মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি;
- ম্যাসেজ করা
- আলো
- চা - কফি
- গোসল
- তেল
- ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র
ম্যাসেজ করাঃ মাথা ব্যাথা শুরু হলে আপনার কপালের দুই পাশে এবং ঘাড়ে
আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করুন। অনেক সময় কাজের প্রেসারে ক্লান্তি বোধ করলে
মাথা ব্যথা হয়। যার কারণে এভাবে ম্যাসেজ করলে মাথা ব্যাথা কমাতে সহায়তা করে।
আলোঃ আপনার যখন মাথা ব্যাথা শুরু হবে তখন অবশ্যই আলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং বাইরে থাকলে রোদ প্রটেকশন সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। আর যদি আপনি ঘরে থাকেন তাহলে ঘরের আলো নিভিয়ে রাখবেন। কারণ অতিরিক্ত আলোর কারণে মাথাব্যথা আরো বেশি হতে পারে।
চা - কফিঃ আমরা সবাই জানি,চা - কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা মাথাব্যথা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। মাথাব্যথা হলে আদা এবং লবঙ্গ সাথে মধু মিশিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায়।
তেলঃ মাথাব্যথা হলে অ্যাসেনশিয়াল তেল আঙুলে করে কপাল আর ঘাড়ের রগে
ম্যাসেজ করলে মাথাব্যথার যন্ত্রণা অনেকটা কমে আসে।
ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রঃ মাথা ব্যাথা হলে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন। যেমনঃটিভি,স্মার্ট ফোন,ল্যাপটপ,কম্পিউটার ইত্যাদি। এসব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের স্কিনের আলোর কারণে মাথা ব্যথা আরো বাড়তে পারে।
গোসলঃ আপনার মাথা ব্যথা হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে নিবেন। এতে দেখবেন মাথা ব্যথার যন্ত্রণা থেকে আরাম পাবেন। এছাড়াও কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানি মাথায় ঢাললে আপনার ভালো লাগবে।
মাথা ব্যথা ও বমি কোন রোগের লক্ষণ
মাথা ব্যথা হলে আমরা অনেকেই তা স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকি। কিন্তু মাথা ব্যথা হলে আমাদের স্বাভাবিকভাবে নেওয়া উচিত না। কারণ মাথা ব্যথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সবারই সতর্কতা থাকতে হবে। অনেক সময় মাথা ব্যথা এবং বমি একসাথে হয়ে থাকে। এবার চলুন মাথা ব্যথা ও বমি কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে তা আমরা জেনে নেই।
- মস্তিষ্কে টিউমার এর কারণে মাথা ব্যথা এর সাথে বমি হয়ে থাকে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব হয়
- মাদকাসক্ত যারা তাদের অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে মাথা ব্যথার সাথে বমি হয়ে থাকে।
- আমরা মাইগ্রেনকে এক ধরনের সাধারণ মাথা ব্যথা বলে থাকি। এই প্রাথমিক মাইগ্রেনের মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়ে থাকে।
- এছাড়াও যদি মাথা ব্যথার পাশাপাশি তৈলাক্তক যুক্ত ভাজাপোড়া থাকেন গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যার কারণে বমি হতে পারে।
- সর্দি জ্বর মাথা ব্যথা একসাথে হলে বমি বমি ভাব বা বমি হয়।
- ক কোভিড -১৯ ভাইরাসের সংক্রমনের ফলে ঠান্ডা জ্বর,কাশি,নিঃশ্বাসের সমস্যা,ক্লান্তি,গলা ব্যথা, এর সাথে মাথা ব্যথা এবং বমি বমি ভাব হয়ে থাকে।
তীব্র মাথা ব্যথার ঔষধ
মাথা ব্যথা আমাদের কমবেশি সকলেরই হয়ে থাকে।পৃথিবীতে হয়তো এমন মানুষ খুঁজে
পাওয়া যাবে না যার কখনো মাথা ব্যথা হয় না বা হয়নি। আর এই মাথা ব্যথার তীব্র
যন্ত্রণা যে কতটা কষ্টকর যখন হয় তখন আমরা অনুভব করতে পারি। আবার কিছু কিছু মাথা
ব্যথা হয় সাময়িকের জন্য। কিন্তু অনেকেই মাথা ব্যথা ভালো করার জন্য হুটহাট করে
ওষুধ খেয়ে ফেলে যা মোটেও ঠিক না। তাই যখন মাথা ব্যথা হলে প্রথম অবস্থায় না
খাওয়াই ভালো।
এছাড়াও উপরোক্তে আমরা মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনারা ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করেও মাথা ব্যথা দূর করতে পারেন। আর যদি অতিরিক্ত শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। তারপরও অনেকে মাথা ব্যথার ওষুধ সম্পর্কে জানতে চায়। তাই নিচে আমরা আপনাদের জন্য তীব্র মাথা ব্যথার ঔষধ এর নাম দেওয়া হলঃ
- Migrex Tablet 200 mg ( Incepta)
- Tufnil Tablet 200 mg (Eskayef)
- Namitol Tablet 200mg (Aci)
- Arain Tablet 200mg (Opsonin)
- Lograin Tablet 200 mg (Opsonin)
- Tolmic Tablet 200mg (Beximco)
শেষ কথা
মাথা ব্যথা হলেই মাথা ব্যথা দূর করার জন্য তাড়াতাড়ি ওষুধ খাওয়া ঠিক না চেষ্টা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ার। কেননা আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসকের পাশাপাশি যদি মনে করেন মাথা ব্যথা হলে কিভাবে ওষুধ খাওয়া ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে ভালো করতে পারি তাহলে আজকের লেখাটি পড়ুন আশা করছি আপনি উপকৃত হবেন।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url