টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক,আজকে কি আপনারা জানতে চাচ্ছেন টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। তাহলে আজকে আর্টিকেলটি শুধু আপনাদের জন্য। আজকে আমরা টিবি কি,টিবি রোগ কেন হয় এবং টিবি রোগের লক্ষণ গুলো কি তা সম্পর্কে আপনাদের টিবি রোগের লক্ষণ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবো। তাই দেরি না করে মনোযোগ সহ টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন
টিবি বা যক্ষ্মা একটা মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে হলে সামাজিক সচেতনতার কোন বিকল্প নাই। তাই সচেতনতা বা জানার লক্ষ্যে টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য।

ভূমিকা

"যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই এই কথার ভিত্তি নাই"এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বলি,টিবি বা যক্ষ্মা হলে ভয় না পেয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে টিবি বা যক্ষ্মা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ।তাই এই রোগ থেকে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি,কাশি বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। এ জীবাণু কয়েক ঘন্টা বাতাসে ভেসে থাকে।
এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে। এভাবেই এক ব্যক্তি হতে অন্য ব্যাক্তিতে সংক্রামিত হয়। তথ্য মতে,প্রতিদিন বিশ্বে যক্ষ্মায় মারা যায় চার হাজার একশত জনেরও বেশি মানুষ। তাই ব্যাধি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

টিবি কি

টিবি বা যক্ষ্মাঃ টিবি বা যক্ষ্মা রোগ এক ধরনের মারাত্মক সংক্রমণ ব্যাধি। ইংরেজিতে টিউবারকিউলসিস সংক্ষেপে টিবি বলে। বিভিন্ন প্রকারের মাইক্রোব্যাকটেরিয়া সম্পর্কিত একটি রোগ। যা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে রোগ হয়।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি থুতু বা কাশির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু বাতাসে মিশে রোগের সংক্রমণ ঘটায়। এ রোগ সবচেয়ে ফুসফুসে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। টিবি ফুসফুসের আক্রান্ত করলেও শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও এটি হতে পারে। যেমনঃ হাড়,মস্তিষ্কের আবরণ,লসিকা গ্রন্থি ইত্যাদি।

টিবি রোগ কেন হয়

টিবি বা যক্ষ্মা যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি একটি মারাত্মক সংক্রামক একটি ব্যাধি। মাইকো ব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে যদি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে এই রোগ হয়। যক্ষা সাধারণত ফুসফুসে বেশি প্রবাহিত করে। একজন সংক্রামিত ব্যক্তি তার হাঁচি,কাশি,মাধ্যমেও সংক্রামিত হয়।

অর্থাৎ বলা যেতে পারে করোনাভাইরাসের মতো এটিও বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং ড্রপলেটের মধ্য দিয়ে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এক কথায় ছোঁয়াচে রোগ বলা হয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর তথ্য মতে জানা যায়,পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক - চতুর্থাংশ মানুষই যক্ষ্মায় আক্রান্ত।

টিবি কত প্রকার ও কি কি

আপনারা অনেকে জানতে চান টিবি বা যক্ষ্মা কত প্রকার এবং সেগুলো কি কি। আজকে আমরা টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জন্য টিবি বা যক্ষ্মা কত প্রকার তা সম্পর্কে নিচে তুলে ধরলাম।
 
টিবি বা যক্ষ্মা দুই প্রকার তা হলঃ
  • সুপ্ত টিবি
  • সক্রিয় টিবি
সুপ্ত টিবিঃ সুপ্ত টিবি সুপ্ত যক্ষ্মা হলো আপনার শরীরে টিবি সংক্রামিত আছে । কিন্তু ব্যাকটেরিয়া গুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। যা লক্ষণগুলো দেখা যায় না। অর্থাৎ সুপ্ত টিবি সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন উপসর্গ থাকে না এবং অন্যদের সংক্রমণ করতে পারে না।

সক্রিয় টিবিঃ সক্রিয় টিবি বা সক্রিয় যক্ষ্মা হল টিবি ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে বৃদ্ধি পায় যা সক্রিয় লক্ষণ করা যায়। যেমন;
  • কাশি হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
  • ক্ষুধা না লাগা
  • ঠান্ডা জ্বর

টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন

টিবি বা যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ যা সাধারণত ফুসফুসের আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও হাড়,মস্তিষ্কের আবরণ,কিডনি,প্রজনন অঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে। যক্ষ্মা বা টিবি একটি বায়ুবাহিত রোগ যা বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি হতে অন্য ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে থাকে। তাই এই রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আমাদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। এবার চলুন টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেই,
  • দীর্ঘমেয়াদী কাশি ( তিন সপ্তাহ অধিক)
  • কাশির সাথে রক্ত বের হওয়া
  • জ্বর
  • রুচি কমে যাওয়া
  • বুকে ব্যথা
  • দুর্বলতা অনুভব করা
  • ওজন হ্রাস
  • রাতে ঘাম ঝরা

টিবি রোগের প্রতিকার

যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই এই কথার ভিত্তি নাই। টিবি বা যক্ষ্মা হলে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে তা ভালো হয়ে যায় । তবে অতীতে ছিল 'যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা' যা একসময় আমাদের সমাজে প্রচলিত ছিল। সে সময় টিবি বা যক্ষ্মা ছিল একটা ভয়াবহ ব্যাধি। এই ব্যাধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না বলে বা চিকিৎসা ছিল না বলে এই ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধিতে অনেক মানুষ মারা যেত।

কিন্তু বর্তমানে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে টিবি বা যক্ষ্মা ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদেরকে টিবি বা যক্ষ্মা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে। তাহলে এবার চলুন টিবি রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
  • কিন্তু এখন বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ব্যাধির চিকিৎসা হচ্ছে। টিবি রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এ ব্যধি থেকে বাঁচতে হলে একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কিছু বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
  • বাসার আশেপাশে খোলামেলা পরিবেশ থাকতে হবে যেন আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
  • টিবি আক্রান্ত ব্যক্তিকে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে প্রয়োজনে নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্য মানুষদের সংস্পর্শে না যাওয়াই ভালো।
  • পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • নিয়মিত কফ পরীক্ষা করতে হবে। কারণ জীবাণুমুক্ত হয়েছে কিনা জানতে হবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেখানে সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

টিবি রোগীর খাবার তালিকা

বর্তমানে আমাদের দেশে টিবি বা যক্ষ্মা হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি চিকিৎসার পাশাপাশি ভিটামিনযুক্ত এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ানো যায় তাহলে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতি হয়। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি যক্ষ্মা নিরাময় করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

তাই আমাদের উচিত হবে টিবি বা যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ম করে প্রতিদিন ভিটামিন যুক্ত খাবার এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়ানো। এখন চলুন,জেনে নেওয়া যাক টিবি বা যক্ষ্মা রোগীকে যেসব খাবার খাওয়ানো উচিত তা নিচে তুলে ধরা হলো;

ভিটামিন যুক্ত খাবার যেমনঃ
  • গাজর
  • পেয়ারা
  • কমলালেবু
  • টমেটো
  • আমলকি
  • বাদাম
  • ক্যাপসিকাম
  • বীজ
  • পেঁপে
  • আম
  • শাকসবজি
প্রোটিনযুক্ত খাবারঃ
  • ডিম, চিনা বাদাম 
  • ড্রাই ফুড
  • মুরগির মাংস

উপসংহার

যেহেতু টিবি বা যক্ষ্মা একটা ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাওয়াই উত্তম। টিবি বা যক্ষ্মা হলে ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে এই ব্যাধি সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।এর পাশাপাশি সকলকে টিবি রোগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং টিবি রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্যই আমরা আপনাদের জন্য টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন আর্টিকেল এ বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url