ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ ও প্রতিকারআপনারা কি ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে চলুন আজকে আমরা ডেঙ্গু জ্বর কি,বর্তমানে ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো কি কি এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়ে আমরা আজকের লেখার মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। আমরা সকলেই জানি ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক ভয়ানক হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
বর্ষার মৌসুম এলে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ আমরা লক্ষ্য করি,সাধারণত এটি একটি মশাবাহিত সংক্রমণ রোগ। তাই এ বিষয়ে সবারই সচেতন থাকা উচিত। তাই নিচে আমরা ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আজকের লেখাটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নেব।
ভূমিকা
ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ে হয়ে থাকে। এটি একটি
সংক্রামিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বর চার ধরনের ভাইরাসের যেকোনো একটি কারণে হয়ে থাকে যা
মশার কামড়ের মাধ্যমে রোগীর শরীরে ছড়ায়। স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের প্রধান বাহক
হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন
যা সংক্রামিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে বহন করে থকে। ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর কী
ডেঙ্গু জ্বর হলো একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ। এবং এটি একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মকালীন রোগ। এডিস মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমনের ফলে ৩-১৫ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো লক্ষ্য করা যায়। উপসর্গগুলো হলো;
- জ্বর
- মাথা ব্যথা
- বমি হওয়া
- পেশীতে ব্যথা
- ফুসকুরি লক্ষ্য করা যায়
বর্তমানে ডেঙ্গুর লক্ষণ কি কি
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যেহেতু এটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ।সেহেতু সবাইকে ডেঙ্গু সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাই আমরা নিচে ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো কি জেনে নেই,ডেঙ্গু শুরু হয় সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর দিয়ে যা ১০৩,১০৪,১০৫ ডিগ্রী ফরেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও
- প্রচন্ড শরীর ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- চোখের পিছনের দিকে ব্যথা
- অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
- হাড়ে ব্যথা
- শরীর দুর্বল ও নিস্তেজ হয়
- রুচি কমে যাবে
- শরীরে ফুসকুড়ি হয়
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
মারাত্মক লক্ষণ
- রক্ত বুমি
- মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট
- দ্রুত নাড়ি স্পন্দন
- ঘুম ঘুম ভাব
- চেতনা হারানো
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বর খুব পরিচিত একটি ব্যাধি। কিন্তু অনেকেই জানেনা ডেঙ্গুজ্বর কত দিন পর্যন্ত থাকে। এবার চলুন জেনে নেই আসলে ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে।ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ২-৬ দিন অথবা ৩-১০ দিন পর্যন্ত আমাদের শরীরে বিদ্যমান থাকে। যত দ্রুত ডেঙ্গুজ্বর চিহ্নিত করতে পারবেন ততো তাড়াতাড়ি আপনি সুস্থ হবেন। ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর সারতে কত দিন লাগে
ডেঙ্গু জ্বর ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই সাবধানতায় থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
নিচে আমরা ডেঙ্গু জ্বর - ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই,
ডেঙ্গুজ্বরঃ ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি একটি সংক্রামিত রোগ। যা স্ত্রী এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। অল্প কিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রভাব গভীর হয়। চলুন জেনে নেই,ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো। উচ্চ জ্বর ১০৩-১০৫ ডিগ্রী ফরেনহাইট হতে পারে। এছাড়াও
- প্রচন্ড শরীর ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- চোখের পিছনের দিকে ব্যথা
- অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
- হাড়ে ব্যথা
- শরীর দুর্বল হবে
- রুচি কমে যাবে
- শরীরে ফুসকুড়ি হয়
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
মারাত্মক লক্ষণ
- রক্ত বুমি
- মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট
- দ্রুত নাড়ি স্পন্দন
- চেতনা হারানো
চিকিৎসাঃ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। এর পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন তিন বেলা প্যারাসিটামল খেতে হবে। ডোজ ভাগ করে প্রতিবারে ৫০০ মিলিগ্রাম খাওয়া উচিত। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচুর পানির পাশাপাশি স্যালাইন নিতে হবে। প্যারাসিটামল ও পানি ডেঙ্গুর আসল চিকিৎসা। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে, ফলের জুস,ডাবের পানি খেতে হবে।
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু এবং গ্রেট ১ বাসায় চিকিৎসা করা উচিত। এবং গ্রেড ২ প্রথম দিকে ধরতে না পারলে এবং চিকিৎসা দিতে না পারলে শকে অর্থাৎ গ্রেড ৩ এবং গ্রেড ৪ এ চলে যেতে পারে। আবার যদি গ্রেড ২ তে পেটের ব্যাথা হচ্ছে যা কমছে না বমি হচ্ছে,প্রেসার ঠিক থাকছে না তাহলে জরুরী হাসপাতালে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্লাড প্রেসার মনিটর করতে হবে যাতে পালস প্রেসার ২০ এর বেশি থাকে। এবং সিস্ট লিক প্রেসার ৯০ এর বেশি রাখতে হবে। এটা ঠিক রাখতে পানিও স্যালাইন দিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কি করতে হবে
ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এর পাশাপাশি পরিপূর্ণ বিশ্রাম থাকতে হবে। তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাইতে হবে। যেমনঃ
- ডাবের পানি
- লেবুর শরবত
- ফলের জুস
- খাবার স্যালাইন
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
ডেঙ্গুর জন্য কি কি পরীক্ষা করা হয়
জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সব জ্বর যে ডেঙ্গু তা কিন্তু না। পরীক্ষার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো রোগীর লক্ষণ,উপসর্গ,শারীরিক অবস্থা। ডেঙ্গু জ্বরের প্রথম দিন থেকে পরের দশ দিন পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রথমে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।
কারণ ডাব্লিউ বি সি কাউন্ট কমে যায় এবং প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায়। আর খুব সহজে বোঝা যাবে সেটি হলো এন এস ওয়ান। যা একদিনের মধ্যেই করা যায়। এবং পাঁচদিনের মধ্যে এই এনএস ওয়ান পজিটিভ হয়ে যায়। এরপর একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট রয়েছে তা হলো র্যাপিড টেস্ট। মূলত এই টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায় ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা।
ডেঙ্গু হলে কি ফল খেতে হয়
সাধারণত জ্বর হলে আমাদের কারোই খাওয়ার প্রতি রুচি থাকে না। তবুও খাবারের প্রতি
বিশেষ নজর দিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে চিকিৎসকেরা দিনে অন্তত আড়াই লিটার থেকে তিন
লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন। জ্বর হলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই পানি পান করতে
চায় না বা ইচ্ছেও করে না। তাই পানির চাহিদা পূরণ করতে এবং ডেঙ্গু হলে কি ফল বেশি
বেশি খেতে হবে চলুন জেনে নেই,
- ডাবের পানি
- ফলের জুস
- মালটা
- কমলা
- লেবু
- পেয়ারা
- ডালিম
- আনারস
- স্ট্রবেরি
এসব ফল জাতীয় খাবার খেতে পারেন। যা রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফলের রসে
ভিটামিন সি আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং ডাবের পানিতে
খনিজ বা ইলেকট্রোলাইটস আছে যা ডেঙ্গু জ্বরে খুবই প্রয়োজনীয়।
ডেঙ্গু রোগের ওষুধ
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা প্যারাসিটামল দিয়ে জ্বরের মাত্রা ও যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় ইলেকট্রোলাইট তরল দেওয়া হয় । এতে রোগীর শরীরে প্রয়োজনীয় জল এবং লবণের জোগান বজায় থাকে। ডেঙ্গু রোগী ব্যক্তিকে বাসায় নিয়মিত জুসের রস,ডাবের পানি,স্যালাইনের পানি নিয়মিত খাওয়াবেন । এছাড়াও কমলা,লেবু,আনারস,মালটা,পেয়ারা,ডালিম,নিয়ম করে খাওয়াবেন।
উপসংহার
আমরা সবাই জানি ডেঙ্গু জ্বর কতটা ভয়ানক হতে পারে। তাই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে একটা ব্যাড হ্যাবিট লক্ষ্য করা যায় তা হল জ্বর আসলেই আমরা যাচাই বাছাই না করে জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ খেয়ে ফেলি যা মোটেও উচিত নয়। আগে বুঝতে হবে জানতে হবে জ্বর হওয়ার কারণ কি এজন্য আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারপর ব্যাধি নির্ণয় করে তার উপর চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url