ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কে জানুন

আপনারা কি ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু আপনাদের জন্য। আজকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভয়াবহ মরণ ব্যাধি ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা করবো। ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ আর্টিকেলের মাধ্যমে ক্যান্সার কি,ক্যান্সার রোগীর লক্ষণ কি কি হতে পারে তা আমরা বিস্তারিত তুলে ধরবো। তাই মনোযোগ সহ পড়ে ফেলুন ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এই আর্টিকেলটি।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কে জানুন
আমরা প্রত্যেকেই ক্যান্সার নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়ে যাই। কারণ ক্যান্সার হলে বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে যদি বুঝতে পারেন তাহলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়া সম্ভব। তাই ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভূমিকা

সারা বিশ্বে সকলের কাছে আতঙ্কিত এবং ভয়াবহ একটি মরণব্যাধি যার নাম হলো ক্যান্সার। আমাদের সবার মনে ক্যান্সার হলে মৃত্যুর কথায় আগে মনে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যাধির কোন সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে সতর্কতা থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় যদি এই ব্যাধি ধরা পড়ে তাহলে সময় মত চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
তাই আমাদের সকলের উচিত ক্যান্সার সম্পর্কে বা ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা থাকা। তাই আপনাদের সচেতনতা বা জানার লক্ষ্যে আমাদের আজকের এই ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ক্যান্সার

আজকে আমরা কথা বলবো ক্যান্সার নিয়ে।ক্যান্সার নিয়ে অনেকের মনে সংশয় রয়েছে। আসলে ক্যান্সারটা কি? ক্যান্সারটা আমাদের শরীরের ভেতর থেকেই তৈরি হয় এবং আমাদের নিজের কোষ থেকেই তৈরি হয়। অর্থাৎ আমাদের শরীরে যে স্বাভাবিক কোষগুলো রয়েছে তা যদি কোন কারনে পরিবর্তন হয়ে যায় তার ভিতরে যে গঠনগুলো আছে তা যদি পরিবর্তন হয়ে যায় তখন তা ক্যান্সারের রূপান্তরিত হয়ে যায়।

এই ক্যান্সারের দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে প্রথম বৈশিষ্ট্য হল ক্যান্সার যেখানে তৈরি হলো তার আশেপাশে যে টিস্যু রয়েছে সেখানে শিকড়ের মত বিস্তার লাভ করে। এবং কোষগুলো বা কলাগুলো অঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল যেটাকে আমরা খারাপ বা মারাত্মক লক্ষণ বলি সেটি হল ক্যান্সার যেখানে হয়েছে তার দূরবর্তী অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পরা।

ক্যান্সার কি বংশগত রোগ

আমাদের দেশের শহর এবং গ্রামে অসংখ্য রোগী বিভিন্ন ক্যান্সারে ভুগছে। অধিকাংশ রোগী সঠিক চিকিৎসা বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় না। ক্যান্সারের সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে আমাদের ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগ নির্ণয় করা যায় তাহলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। যেহেতু ক্যান্সার একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যা চিকিৎসা করলে ভালো হওয়া সম্ভব। 

এখন জেনে নেই ক্যান্সার কি বংশগত রোগ। উত্তরে বলবো হ্যাঁ বংশগত রোগের কারণেও ক্যান্সার হয়।আর এই ক্যান্সার কোষের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তন গুলি একজন ব্যক্তির পিতা-মাতার কাছ থেকেও পেয়ে থাকে। যাকে আমরা সহজ ভাবে বলি উত্তরাধিকার সূত্র। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জ্বীন মিউটেশন ডিম্বাণু কোষ বা শুক্রাণুতে ঘটে থাকে। 

এই ডিম্বাণু কোষ বা শুক্রাণু থেকে ভ্রূণ বিকশিত হয় বা স্থানান্তরিত হয় । এভাবেই মিউটেশনের কারণে একটা শিশুর এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও স্থানান্তরিত হতে পারে।

ক্যান্সার কত ধরনের হতে পারে

ক্যান্সার বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন খাবার এবং ভুল জীবন - যাপনে,পারিবারিক জীনগত কারণে অথবা বয়স ইত্যাদির কারণে ক্যান্সারের আবির্ভাব হয়। যদিও আমাদের উত্তর এগুলো না। তাই এবার চলুন প্রশ্নের উত্তরে ফিরে যাই, এই পৃথিবীতে ১০০টিরও বেশি ধরনের ক্যান্সারের ধরণ পাওয়া গেছে।
বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ক্যান্সার কে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন;

১.কার্সিনোমাঃ কার্সিনোমা ক্যান্সার সাধারণত ত্বকে বা টিস্যুতে শুরু করে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে আবরণ করে আক্রান্ত করে। যেমনঃ ফুসফুস,ত্বক,অগ্নাশয়,ডিম্বাশয় ইত্যাদি।

২.নিউকেমিয়াঃ এই নিউকেমিয়া ক্যান্সার রক্ত তৈরিকারী কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। এই নিউকেমিয়া ক্যান্সারে বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হয়।

৩.সারকোমাঃ সারকোমা হচ্ছে হাড়,কারটিলেজ,পেশী,চর্বি এবং রক্তনালী গুলি টিস্যুতে যে ক্যান্সার হয়ে থাকে।

৪.মেলোমাঃ যে কোষগুলি প্রতিরোধ সহায়ক হিসেবে থাকে সেই কোষগুলিতে যে ক্যান্সার হয় তাকে মেলোমা বলা হয়।

৫.লিম্ফোমাঃ লিম্ফোমা রক্ত তৈরি কোষ থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে। লিম্ফোমা শ্রেণীর ক্যান্সারে সাধারণত শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হয়।

ক্যান্সার রোগীর লক্ষণ

ক্যান্সার হলে আপনার শরীরে বিভিন্ন রকমের লক্ষণ দেখা দিবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে । লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চলুন প্রাথমিক লক্ষণগুলো কি কি নিচে জেনে নেই,
  • দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে যদি এমন হয় তাহলে বুঝতে হবে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  • শরীরে কোন স্থানে দীর্ঘদিন যাবত ব্যথা করবে।
  • শরীরে অস্বাভাবিকভাবে মাংসপিণ্ড দেখা দিবে ।
  • দীর্ঘ সময় ধরে আপনি অবসাদগ্রস্ত এবং ক্লান্তি অনুভব করবেন।
  • মল - মূত্রত্যাগের পরিবর্তন ঘটবে।
  • কাশির সাথে অকারণে রক্তক্ষরণ হবে।
  • প্রচন্ড জ্বর অনুভব করবেন।
  • ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা আঁচিল দেখা দেয়, পাশাপাশি অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে।
  • এছাড়াও পা ফুলে যেতে পারে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কে জানুন

ক্যান্সার নাম শুনলে আমাদের মাঝে একটা ভয় কাজ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে তার যদি চিকিৎসা করা হয় তাহলে ক্যান্সার ভালো হয়। কিন্তু যদি দীর্ঘদিন যাবত শরীরে ধীরে ধীরে কোষের বিস্তার লাভ করে তাহলে তা অবনতির দিকে যায়। ক্যান্সার রোগীদের বেশ কিছু লক্ষণ আছে যেসব লক্ষণ দেখলে ডাক্তারেরা বুঝতে পারে যে রোগীর পরিস্থিতি কেমন। এবং তারা কিছু লক্ষণ দেখে নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারে যে এই রোগীর মৃত্যু খুব কাছাকাছি ।

এমনই কিছু লক্ষণ পরীক্ষা বা গবেষণা করে পাওয়া গেছে,যা ৩৫৭ জন রোগীর মধ্যে ৫৭ শতাংশ রোগী মারা গেছেন। এবার ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে চলুন জেনে নেই,
  • কথা বলা সময় মুখ জিব্বার প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যায় বা ঝাপসা দেখে।
  • চোখের পাতা বন্ধ করতে পারেনা।
  • মাথার সামনের দিকে হেলে পড়ে।
  • আলোর কমবেশিতে চোখের পিউপিল কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
  • কন্ঠনালী থেকে ঘড় ঘড় শব্দ হয়।
  • নাক থেকে ঠোঁটের দুই কোণ পর্যন্ত যে রেখা পড়ে তাতে ব্যাপক ভাজ পড়ে ।

ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় কি

ক্যান্সারকে আমরা সবাই মরণব্যাধি হিসেবেই জানি। কিন্তু এই মরণব্যাধি ক্যান্সার যেন না হয় সেদিকে আমরা কয়জন লক্ষ্য রাখি। আমরা যদি নিয়ম-কানুন মেনে জীবন যাপন করি তাহলে কিন্তু আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমাদের অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। আর এসব নিয়ম কানুন মেনে চলার মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে পারি। এবার চলুন ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় কি নিচে জেনে নেই,
  • আমরা সবাই জানি ধূমপান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু কয়জনই এই কথাটা মেনে চলি। কিন্তু আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ ধূমপানের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • আমরা সবাই জানি,সূর্যের আলোয় ভিটামিন ডি থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এই ভালোর পাশাপাশি অনেক ক্ষতিও হয়। অতিরিক্ত সূর্যের তাপের কারণে নির্গত অতিবেগুনি রশ্নি আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বকের ক্ষতি করে ।যার ফলে স্কিন ক্যান্সার হতে পারে। তবে সূর্য ওঠার পরপর তাপটা গ্রহণ করতে পারেন।
  • আমাদের সকলকেই সুস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি নজর রাখতে হবে। এবং নিয়ম করে খাবার খাইতে হবে। অনিয়মিত খাবার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টিকর ফলমূল শাকসবজি রাখতে হবে।
  • হারাম বা অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে সুরক্ষিত উপায়ে সহবাস করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যান্সারের ঝুকে কমে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে শরীরের হরমোন,কোষ বৃদ্ধির হার,ইনসুলিন সংবেদনশীল স্বাভাবিক থাকে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
  • বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমনের কারণেও হতে পারে। তাই নিয়ম করে ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে পারেন।
  • যেহেতু ক্যান্সার বংশগতভাবেও হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে পরিবারের কারো পুরনো রোগ আছে কিনা সেই সম্পর্কে জানতে হবে। এবং মাঝে মাঝে শরীর চেকআপ করতে হবে।

ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা

যেসব খাবার ক্যান্সার রোগীদের জন্য প্রযোজ্য। তার নিচে তুলে ধরা হলো;
  • প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খাইতে হবে। যেমনঃ হলুদ ফল, লাল ফ্‌ লাল শাক ইত্যাদি।
  • নরম ভাত খাওয়াতে হবে এবং ঠান্ডা তরকারি তেল মসলা কম দিয়ে রান্না করা। কারণ কেমোথেরাপির সময় তা হজমে সহায়তা করে।
  • স্যুপ খাইতে পারে। যেমন টমেটো স্যুপ
  • প্রতিদিন রসুন খেতে পারেন কারণ রসুন এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও দুধ ডিম মাছ মুরগির মাংস খেতে পারেন। এতে প্রোটিন ভিটামিন এর ঘাটতি পূরণ করে।
  • ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। টকফলে প্রচুর ভিটামিন সি আছে বেশি বেশি খেতে পারেন।

উপসংহার

আমরা সকলেই জানি,ক্যান্সার একটি মারাত্মক মরণব্যাধি। তবে প্রথম অবস্থায় যদি লক্ষণ গুলো আমরা বুঝতে পারি তাহলে দ্রুত চিকিৎসা করলে আমরা ক্যান্সার থেকে মুক্ত হতে পারি। এর পাশাপাশি ক্যান্সারের সঠিক লক্ষণ গুলো আমাদের সবার জানা উচিত। তাহলে আমরা সহ আমাদের পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে পারবো,এবং সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবো। তাই আপনাদের জন্য ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ আর্টিকেল টিতে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। আশা করছি,আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url